ভোলা বোরহানউদ্দীনে তাণ্ডবের নেপথ্যে ছাত্রদল ও যুবদল

ভোলা বোরহানউদ্দীনে তাণ্ডবের নেপথ্যে ছাত্রদল ও যুবদল
ভোলা বোরহানউদ্দীনে তাণ্ডবের নেপথ্যে ছাত্রদল ও যুবদল , ছবিঃ সংগ্রহ

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভোলার বোরহানউদ্দীনে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে কাচিয়া গ্রামের এক যুবকের ফেসবুক মেসেঞ্জারে হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে আয়োজিত সমাবেশে তাণ্ডব চালায় কিছু দুর্বৃত্ত।

কিন্তু বিপ্লব নিজেই আগে বোরহানউদ্দিন থানায় এসে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অবশ্য এরই মধ্যে বিপ্লবের কাছে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন আসে এবং ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি দুই হাজার টাকা দিলে তার হ্যাক করা আইডি মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানায়।

বিপ্লবের দেওয়া ওই নম্বরটি ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে শরীফ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আনা হয় এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয় ইমনকে। পুলিশ আটকে রাখে বিপ্লবকেও।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, বিপ্লবকে যখন থানায় আটক করে রাখা হয়, তখনই শনিবার বিকেলে বোরহানউদ্দিন সদরে প্রথম বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলের কিছুক্ষণ পরেই পরের দিন রোববার সকাল ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বান জানিয়ে শুরু হয় মাইকিং।

সন্ধ্যার মধ্যে বোরহানউদ্দিনের সর্বত্র সমাবেশের আহ্বান প্রচার হয়ে যায় এবং সমাবেশের আহ্বানকারী হিসেবে এই এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় বাটামারা পীর মাওলানা মহিবুল্লাহ্র নাম বলা হতে থাকে।

বোরহানউদ্দিন থানার ওসি ম. এনামুল হক বলেন, ‘আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি এবং মাওলানা সাহেবদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে রাতে তাদের নিয়ে বৈঠকে বসি। ততক্ষণে হ্যাকার সন্দেহে আটক ইমন এবং শরীফকেও থানায় নিয়ে আসা হয়।’

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সমাবেশের পূর্বনির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১১টা। ১১টার অনেক আগেই সমাবেশস্থলে লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। ১০টার দিকে সমাবেশে অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এহসানুল হক ও পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বক্তব্য দেন। এরপর সাড়ে ১০টা নাগাদ জয়া মহিলা মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল গণি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশ শেষ করেন।

যখন সমাবেশ শেষ করে দেওয়া হলো তখনও মানুষ আসছিল দূরদূরান্ত থেকে। তাদের কাছে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি, এমন খবর পৌঁছালে তুলকালাম শুরু হয়। মাওলানা মিজান নিজেও পুলিশের সঙ্গে আটকা পড়েছিলেন ঈদগাহ মাঠ-সংলগ্ন মসজিদে। তিনি বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের প্রতিরোধের অনেক চেষ্টা করেছি।’ মসজিদে হামলাকারীদের কাউকে তিনি চিনতে পারেননি বলেও জানান।

কারা মসজিদে হামলা করেছিলেন: এরই মধ্যে মসজিদে হামলার যে সব ভিডিওচিত্র পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসছে হামলায় অভিযুক্তদের নাম ও ছবি। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন ছাত্রদলের উপজেলা সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সবুজ।

ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে তিনি কাউকে বলছেন এখনও গুলি করা হচ্ছে না কেন? অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, যুবদলের সভাপতি শিহাবউদ্দিন হাওলাদার এক বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ভাওয়ালবাড়ির মন্দিরে ও হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলার নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে শিবির নেতা মামুন ওরফে কলিকে। এরই মধ্যে আরিফ ও সজীব নামে ছাত্রদলের দু’জনকে পুলিশ আটক করেছে।

অন্য একটি ভিডিওতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার আলম খানের ছোটভাই যুবদল নেতা আশরাফুল আলম খান এবং ছাত্রদল নেতা হেলাল মুন্সিকে মারমুখী অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ার আলম খানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা নিয়ে বিএনপির কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। বিএনপি নেতাকর্মীদের যারা ওই সমাবেশে গিয়েছিলেন, তারা গিয়েছেন একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে।

মুসলমান হিসেবে তাদের ধর্মানুভূতি আহত হওয়ায়।’ তিনি আরও বলেন, আগের রাতে থানার বৈঠকে বিএনপিকে ডাকা হয়নি। বিএনপির কোনো পরামর্শ বা সহযোগিতা নেওয়া হয়নি।