ভারতের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী গুমের তালিকায়, বাংলাদেশের গুম নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ !

ভারতের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী গুমের তালিকায়, বাংলাদেশের গুম নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ !
ভারতের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী গুমের তালিকায়, বাংলাদেশের গুম নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ !

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

ভারতের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী সেদেশে ফিরে যাওয়ার পরও গুমের তালিকায় তাদের নাম থাকাটা জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় শিক্ষাবিদ ও অধিকার কর্মীরা।

বাংলাদেশে ‘বলপূর্বক গুমের শিকার’ শীর্ষক জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তালিকাটি অযৌক্তিকতায় ভরপুর এবং এই ধরনের ‘নিম্নমানের’ কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় শিক্ষাবিদ ও অধিকার কর্মীরা।

রোববার (২ অক্টোবর) ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে এই ধরনের ‘অস্বচ্ছ’ কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। যেসব এনজিও বিএনপি কর্মীদের ঘনিষ্ঠ অথবা তাদের দ্বারা পরিচালিত, স্থানীয় সেইরকম কিছু এনজিওর উপর জাতিসংঘের মতো বিশ্বব্যাপী সংস্থার অতিরিক্ত নির্ভরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আর নিজেদের অনুগতদের দিয়ে মানবাধিকার বিষয়ে মিথ্যা বা বানোয়াট মামলা সাজানোর নাটক করার রেকর্ড রয়েছে বিএনপির। 

বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত অধিকার কর্মী আইনজীবী সুলতানা কামাল ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “মানবাধিকারের বিষয়ে বিএনপির মিথ্যা মামলার ইতিহাস রয়েছে”। এই দলটির বিরুদ্ধে ‘আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সুলতানা কামাল বলেন, “বিএনপি কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুয়া মামলা ইতিমধ্যেই তাদের ভাবমূর্তিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।” এদিকে রহিমা বেগম নামের এক বৃদ্ধা নারীর পুনরায় আবির্ভাবের চাঞ্চল্যকর ঘটনা জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি নিয়ে আরও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। রহিমা বেগম ২৭ আগস্ট আত্মগোপনে চলে যান এবং ২৪শে সেপ্টেম্বর পুলিশ তাকে খুঁজে পায়। বাংলাদেশের কিছু অধিকার গোষ্ঠী ‘জোরপূর্বক গুম নিয়ে’ যে দাবি করছে, এই ঘটনাটি সেই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে। আর ওই অধিকার গোষ্ঠীগুলোই জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদন এবং কিছু বিদেশী সরকারের পদক্ষেপকে প্রভাবিত করে বলে মনে হয়। রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান একটি লাশের ছবি দেখে সেটি তার মা বলে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন। মরিওমের সাথে পুলিশ যোগাযোগ করলে, ওই ছবির নারীকেই সে আবার তার মা বলে শনাক্ত করে।

শাহনাজ পারভিন ডলি নামে একজন আইনজীবী বলেন, "প্রমাণ চাওয়ার পুরো ধারণাটি প্রশ্নবিদ্ধ।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপনা ইমতিয়াজ আহমেদ ইন্ডিয়া টুডেকে বলেছেন, এইসব বানোয়াট গুম হওয়ার ঘটনাগুলিই বাংলাদেশের সমগ্র অধিকার ইস্যুকে অসম্মান করে। অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম সময় টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “তালিকায় ভুয়া মামলাগুলি অন্তর্ভুক্ত করে জাতিসংঘের পুরো প্রতিবেদনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।” তিনি এর দায় চাপান স্থানীয় গ্রুপগুলোর ওপর। ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের প্রধান ছিলেন। তিনি জোরপূর্বক গুমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোরালোভাবে দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এই ধরনের মামলাগুলিকে শূন্যে নামিয়ে আনা উচিত।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তালিকার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখলে আরও অনেক সুস্পষ্ট ত্রুটির দেখা মিলবে। প্রতিবেদনে দ্বিচারিতার সবচেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণ হলো, বরখাস্ত সামরিক কর্মকর্তা হাসিনুর রহমানকে গুমের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিযবুত তাহরীরের মতো নিষিদ্ধ র‌্যাডিক্যাল সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখার কারণে সেনাবাহিনীর চাকরির আচরণবিধি লঙ্ঘন করে হাসিনুর। আর হিজবুত তাহরীর এমন একটি সংগঠন যাদের অনুসারীরা সমস্ত পশ্চিমাদের 'মুরতাদ' (ধর্মত্যাগী) বলে মনে করে, তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের মতো শরিয়া প্রবর্তনের কট্টর সমর্থন করে এবং মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের অবসান ঘটাতে চায়। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার বাঙালি নারীরা এর বিরোধিতা করে আসছে। হাসিনুরকে সেনাবাহিনীতে কোর্ট মার্শাল করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি বেশ ফুর্তিতেই আছেন, অনলাইনে টক-শোতে যোগ দিচ্ছেন এবং বিএনপির পক্ষে ওকালতি করছেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মৌলবাদী প্রভাব বা রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। তার এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে, যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা থেকে সুস্পষ্ট হয়।

পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে মামলা

জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে আরো প্রশ্ন উঠেছে এই কারনে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার অনেক আগে ঘটে যাওয়া নিখোঁজের ঘটনাও তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিদায়ী পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে 'এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স' বিষয়ক জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহার করা মূল দলিল বলে মনে করা হয়। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কয়েকদিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের কল্পনা চাকমা নিখোঁজ হন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাত একটায় সাধারণ নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা আগে সাদা পোশাকে ছয় থেকে সাতজন সেনা সদস্য কল্পনার বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাকে অপহরণ করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার অনেক আগেই ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন বরিশাল ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুল্লাহ মোনায়েম। তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন এমন একটি সময় যখন বাংলাদেশ শাসিত হচ্ছিল সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা দ্বারা। ওই সরকার পশ্চিমা দেশগুলির সমর্থনে ভাসছিল। গুম হওয়া শফিক ছিলেন আওয়ামী লীগেরই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা। আবার ২০০৮ সালের ২৫ মে ওই সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিখোঁজ হওয়া মোঃ হাসান খানও জাতিসংঘের গুমের তালিকাযর মধ্যে ঢুকে পড়েছেন।

একজন বাংলাদেশী আইনজীবী বলেন, "আগের শাসনামলে যারা গুম হয়েছিল অবশ্যই বর্তমান সরকারকে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু এই ধরনের গুমের জন্য সেই সময়ের শাসকদের ওপর সমান দায় না চাপানোর যে অভিপ্রায় দেখা গেছে, তা এই গ্রুপের উপর একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।” জাতিসংঘের তালিকায় আগুন সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীরা  বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, জাতিসংঘের করা ৭৬টি বলপূর্বক গুমের তালিকার মধ্যে অন্তত ১০ জন তাদের পরিবারের সাথেই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। আর কমপক্ষে ২৮ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি অভিযোগ। একজন ব্যক্তিকে "নিখোঁজ" হিসাবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু তিনি ‘ঐশ্বরিক আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য’ মাজারে ছিলেন। অধিকন্তু, জাতিসংঘের তালিকায় থাকা কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখে ভিন্নমতাবলম্বী নয়। হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধের সাথে জড়িত থাকা কয়েকজন পলাতক রয়েছে, যাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। 

যানবাহনে আগুন ও বোমা হামলায় অভিযুক্ত এমন আরেক বিএনপি কর্মী ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক ছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে, বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামীর ক্যাডাররা শতাধিক গণপরিবহণে আগুণ লাগিয়ে দেয়। এরফলে কয়েকডজন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বহু মানুষ গুরুতর আহত হন। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর তাদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক রয়েছে। মজার বিষয় হলো- মাদক পাচার, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার মতো একাধিক গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত আরেক ব্যক্তিকেও জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের 'এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স' বিষয়ক প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে সূত্র জানায়, আদালত থেকে জামিন পেয়ে তিনি এখন নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। "গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত এই সমস্ত পলাতকদের জোরপূর্বক গুমের শিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত করাটা ন্যায়বিচারের সঙ্গে প্রতারণা। জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অধিকারের মতো কিছু স্থানীয় এনজিওর অযৌক্তিক বর্ণনা কিনেছে, এটা লজ্জাজনক ব্যাপার," বলেছেন অ্যাডভোকেট। ওই আইনজীবি প্রশ্ন তোলেন, "যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে শত শত পলাতক আসামি বিচারকে ফাঁকি দিচ্ছে। আমরা কি তাদের বলপূর্বক গুমের শিকার হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি? যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা সম্ভব না হয় তাহলে বাংলাদেশে কীভাবে সম্ভব হবে? "আদালতের চোখে পলাতকদের আপনি যদি ভিকটিম হিসাবে তালিকাভুক্ত করা শুরু করেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর অপরাধগুলিকে উপেক্ষা করেন, তাহলে আপনি কি ন্যায়বিচারকে সাহায্য করছেন? উত্তরটি নিশ্চয়ই সহানুভূতিশীল হবে না," মন্তব্য করেন ওই আইনজীবি। 

মানবাধিকার গ্রুপের অন্ধকার অতীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ কর্তৃক হস্তান্তর করা ৭৬ ব্যক্তির তালিকাটি প্রথমে প্রস্তুত করে অধিকার-এর মতো স্থানীয় একটি এনজিও। তারপর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যামনেস্টি দ্বারা পুনর্ব্যবহৃত হয়। তালিকায় কিছু গুরুতর ত্রুটি উপেক্ষা করেই জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি কেনা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সময় টিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “বিরোধীদের নেতৃত্বে চলছে বলে পরিচিত স্থানীয় পক্ষপাতদুষ্ট এমন সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনকে জাতিসংঘের একটি গ্রুপ কীভাবে অন্ধভাবে মেনে নিতে পারে? অধিকার নামের এনজিওর নেতৃত্বে ছিলেন আদিলুর রহমান খান শুভ্র। আদিলুর রহমান ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। সরকারী নিয়ম না মানায় সংস্থাটি সম্প্রতি লাইসেন্স হারিয়েছে। ২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মৌলবাদী হেফাজতে ইসলামের দাঙ্গাবাজদের ঢাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন "হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমাবেশ" নামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে অধিকার। প্রথম সারির এক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ৫ মে ও ৬ মে ভোররাতে যা ঘটেছিল সে বিষয়ে অধিকারের ওই প্রতিবেদন ছিল অর্ধসত্য, একপেশে ও পক্ষপাতমূলক। কাল্পনিক মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ভরপুর অধিকারের ওই প্রতিবেদনটি তখন বাংলাদেশের সব শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো তিরস্কার হয়েছিল। একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এটিকে "কাল্পনিক পরিসংখ্যানে ভরা" বলে অভিহিত করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, যাদেরকে ‘নিখোঁজ অ্যাক্টিভিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গণমাধ্যমে উদ্ধৃতি দিতে দেখা গেছে। ভুলত্রুটি সেখানেই শেষ হয়নি। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের মানচিত্রও বদলে দেয়া হয়েছিল। অধিকার দাবি করেছিল বাগমারায় নিমাই কাছারি গ্রামে মৃত মানুষ পাওয়া গেছে। বাস্তবে স্বাধীন তদন্তে বাগমারায় নিমাই কাছারি নামে কোনো গ্রামের হদিসই পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘ প্রতিবেদনের সুত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুলতানা কামাল বলেন, "কোনও দায়িত্বশীল সংস্থার পক্ষে এরকম কাজ করা বুদ্ধিমান বা সঠিক নয়; বিশ্বস্ত উত্সের সাথে বিষয়বস্তু যাচাই না করে যে কোনো সংস্থার দেওয়া তালিকার উপর জাতিসংঘকে পুরোপুরি নির্ভর করা ছেড়ে দেয়া উচিৎ।”পশ্চিমা কিছু অধিকার সংস্থাকে দ্বৈত মানদণ্ডের জন্য দোষারোপ করে সুলতানা কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজন থাকা সত্বেও তারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতা করেছিল। “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভূমিকা সঠিক ছিল না। তাদের ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হওয়া এবং গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের দাবিকে সমর্থন না করা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক,” ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন সুলতানা কামাল।

ভুল পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেছেন বিএনপি প্রধান

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি মিডিয়া "দুঃখিত খালেদা" শিরোনামে টাইটেলে প্রকাশ করেছিল, বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়াসহ কীভাবে বিএনপি নেতারা ‘নিখোঁজ কর্মী ও নেতা’ বলে অতিরঞ্জিত পরিসংখ্যান দিয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নয়টি জেলায় উচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়েছে। গণমাধ্যম স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার পরিসংখ্যানকে ভুল, অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা হিসাবে প্রমাণ পেয়েছে। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা দাবি করেন, সারাদেশে ৩৪ জেলায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ২৪২ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের লোকজন হত্যা করেছে। তবে তিনি নিহতদের মধ্যে মাত্র পাঁচজনের নাম দিয়েছেন (দুটি হত্যার এবং তিনটি জোরপূর্বক গুমের মামলা)। সংবাদপত্রগুলো নয়টি জেলার স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে ক্রস চেক করে দেখেছে যে, এই সময়ের মধ্যে মাত্র ১৭ জন মারা গেছেন, যেখানে খালেদা দাবি করেছেন ১৫২ জন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;