বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ , সকলের অধিকার নিশ্চিত হোক

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ , সকলের অধিকার নিশ্চিত হোক
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ , সকলের অধিকার নিশ্চিত হোক

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

১০ ডিসেম্বর আজ । জাসিংঘ ঘোষিত বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। কেবল মানুষই নয়, এ বিশ্বের যাবতীয় প্রাণীরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই সকল প্রাণীই দিনে-রাতে প্রাণপণে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত।

কিন্তু ‘সারভাইভাল ফর ফিটনেস’ থিওরি অনুসারে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা ও প্রক্রিয়ায় যেসব প্রাণী সফল হয় কেবল সেগুলোই টিকে থাকে ও বেঁচে থাকে। অন্যগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়। ইতিহাসই এর সাক্ষ্য বহন করে।

বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়ে সমগ্র প্রাণীকূলের মধ্যে সেরা প্রাণী হচ্ছে মনুষ্য জাতি। মহান স ষ্টা আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা বলে ঘোষণা করেছেন।

এই মনুষ্য জাতির মধ্যে সৃষ্টিগত ও জন্মগত দুটি স্বভাব আছে। তার একটি হলো পাশবিক, অন্যটি মানবিক। যেসব মানুষের মধ্যে পাশবিক প্রবণতাটা মানবিক প্রবণতার চেয়ে বেশি প্রবল থাকে, তাদের দাপটটা মানবিক স্বভাবসম্পন্ন মানুষদের চেয়ে বেশি প্রবল হয় এবং তাদের দাপটের প্রাবল্যের কাছে মানবিক স্বভাবের মানুষরা সদা তটস্থ থাকে।

এই প্রবল দাপটওয়ালা লোকরাই আদিকাল থেকে এযাবৎকাল পর্যন্ত জগতে তাদের প্রতাপশালী আধিপত্য বিস্তার করে জীবনযাপনোযোগী সকল অর্থ-সম্পদ নিজেরা কুক্ষিগত করে রাখার কারণে কম দাপটওয়ালা মানুষরা ন্যূনতম স্বচ্ছল ও স্বাভাবিকভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার মতো মৌলিক ও মানবিক অধিকার লাভের জন্যে সেই সময় থেকে যে লড়াই করে আসছে, সেই লড়াইয়ের নামই হচ্ছে মানবাধিকারের লড়াই।

যতোই দিন যাচ্ছে জগৎজুড়ে ততোই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বেড়ে চলছে। এটা কিন্তু এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত চলতেই থাকবে। তবে এর মধ্যেই সংগ্রাম করে মানুষকে চলতে হবে এবং বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। মজার ব্যাপারটা হচ্ছে এটাই যে, এক সময়ের অসহায় নিঃস্ব ব্যক্তিও কোনোভাবে যখন অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যায়, তখন এই লোকটাই অসহায় নিঃস্বদের প্রতি আর সদয় থাকেনা।

সেও অন্য ধনী ও দাপটওয়ালাদের মতো আচার-আচরণ করতে থাকে। এভাবে শোষণ-বঞ্চনা এমন একটা দুরারোগ্য ব্যাধির মতো, যেটা একবার মানুষকে পেয়ে বসে, সে মানুষটি তার প্রচেষ্টায় যদি মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, তখন তার ভিতরে থাকা শোষণ-বঞ্চনা ভোগের যন্ত্রণাময় সংক্রমণটা প্রবল হয়ে ওঠে।

যার ফলে সে নিজেও শোষণকারী ও বঞ্চনাকারী দাপটওয়ালায় পরিণত হয়। এটা অনেকটা পানিচক্রের আকারে আবর্তিতব্য একটা অপার রহস্য। এই চক্রভেদের কোনো উপায় নেই। এটা প্রকৃতিরই একটা অমোঘ চক্র। তবেকি মানুষ থেমে যাবে ? না, থেমে যাবেনা, থেমে যাওয়াও যাবেনা।

তাহলেতো জীবনচক্রই থেমে যাবে। এসব হলো গুঢ় তাত্বিক কথা। তার বিপরীতে এবার আসছি বক্ষ্যমান বাস্তব কথায়। এটা বলতে গিয়েও অর্থাৎ মানবাধিকার প্রসঙ্গে বলতে গিয়েও অনিবার্যভাবেই ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানের কথাতেই আসতে হয়। এই ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানের কারণেই মানবাধিকারের লড়াই।

ধনীরা, ক্ষমতাশালীরা ধন-সম্পদ, ভূমির মালিক। কল-কারখানার মালিক। রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মালিক। আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগ করা ও শাসন করার মালিক। যুগ যুগ ধরে ক্ষমতাশালী, ধনী শাসক-শোষকদের সঙ্গে শাসিত-শোষিতদের অধিকার নিশ্চিতকরণের লড়াইটাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে পরিগণিত হয়ে এসেছে।

এর পেছনে শোষিত-বঞ্চিতদের অনেক শ্রম-ঘাম, রক্ত ও জীবন বিসর্জনের করুণ ইতিহাস জড়িত আছে। তারপরই এটা জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং তারই সূত্র ধরে আজকের দিনটি জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিষয়টা মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের।

সেই মালিক ব্যক্তি হোক, সংস্থা হোক বা রাষ্ট্র হোক তাদের কাছে “বখশিস চাইনা মালিক হিসাবের পাওনা চাই” শীর্ষক শিরোনামের পুরনো দিনের বিখ্যাত একটি ছায়াছবির গানের মতো হিসেবানুযায়ী পাওনাই কেবল নয় পারিশ্রমিকটাই সঠিকভাবে সঠিক সময়ে পাবার অধিকার রাখে পরিশ্রমকারী পাওনাদাররা।

রাষ্ট্রের কাছে পারিশ্রমিকের পাশাপাশি সকল শ্রেণীর নাগরিকেরই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা ও সুবিচারসহ সকল মানবিক ও নাগরিক অধিকার প্রাপ্য।

প্রাপকরা তাদের এসব অধিকার যাতে যথাযথভাবে লাভ করতে পারে- এটাই হচ্ছে মানবাধিকার লড়াইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে বিশ্বব্যাপী মানুষের অধিকার লাভ যেন সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত হয়- এটাই সকলের কাম্য ।