বাংলাদেশের মানচিত্রকে বিচ্ছিন্ন করার পাঁয়তারাকারী সন্ত্রাসী নেতা কে এই নাথান বম

বাংলাদেশের মানচিত্রকে বিচ্ছিন্ন করার পাঁয়তারাকারী সন্ত্রাসী নেতা কে এই নাথান বম
বাংলাদেশের মানচিত্রকে বিচ্ছিন্ন করার পাঁয়তারাকারী সন্ত্রাসীদের নেতা কে এই নাথান বম

আলমগীর হোসেন ।।

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ একটি সশস্ত্র সংগঠন। দেশের ভূখণ্ডকে বিচ্ছিন্ন করার নীলনকশা নিয়ে কাজ করা পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম এই সংগঠনটি নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা-কৌতূহল। ব্যাপক খোঁজখবর চলছে কেএনএফ বা এই কুকি সন্ত্রাসীদের নেপথ্যের কারিগরকে নিয়েও। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্রকে বিচ্ছিন্ন করার পাঁয়তারাকারী সন্ত্রাসীদের নেতা কে ?

জানা যায়, কেএনএফ বা কুকি সন্ত্রাসীদের সেই নেতার নাম নাথান বম। যিনি কেএনএফের সভাপতি। তবে নাথান বম এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছেন সেটি জানা যায়নি। বিশেষ করে পার্বত্য বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় কেএনএফের ঘাঁটিতে চলমান অভিযানের প্রেক্ষাপটে নাথান বমের অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নাথান বমের ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের চেষ্টা করেছে সময়ের আলো।

এর আগে রোববার দৈনিক সময়ের আলোতে ‘ভূখণ্ড বিচ্ছিন্নে কুকিদের নীলনকশা’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। সেখানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের তথ্যচিত্রসহ নাথান বমের সম্পর্কেও কিছু তথ্য প্রকাশ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাথান বম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বান্দরবানের রুমা উপজেলার বম সম্প্রদায়ের মানুষ।

তার বয়স আনুমানিক ৪২ বছর। স্থানীয় তথ্য মতে, এক সন্তানের জনক নাথান বমের স্ত্রী স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক। কাজ করেন পরিবার পরিকল্পনার স্থানীয় কর্মী হিসেবেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা নাথান বম ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কেএনএফ সংগঠনটি।

যদিও গত ৭ এপ্রিল কেএনএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘নাথান বম ২০০৮ সালে অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষিত মহলের কতিপয় নেতাকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংগঠন (কেএনডিও)। সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা ও অত্রাঞ্চলে সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠা করা। এ অরাজনৈতিক সংগঠনটি ২০১৭ সালে সশস্ত্র শাখা সৃষ্টির পর রাজনৈতিক সংগঠনের রূপ নেয়। অতঃপর সংগঠনের নামটিও কেএনডিও থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এ পরিবর্তন আনা হয়।’

যদিও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, নাথান বম নেতৃত্বাধীন কেএনএফ ২০১৬ সালে সশস্ত্র গ্রুপ তৈরি করেছে। সূত্র মতে, কেএনএফের সশস্ত্র গ্রুপ তৈরি হয় ২০১৬ সালে। শুরুতে এই সশস্ত্র গ্রুপের নাম ছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স (কেএনভি), যা পরবর্তীতে কেএনএফের সশস্ত্র শাখার নামকরণ করা হয়, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। সংগঠনটি প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পরিচালনা করলেও ২০১৬ সালের দিকে এসে নিজেদের লক্ষ্য পরিবর্তন করে। তারা বাইরের একাধিক দেশের স্থানীয় পর্যায়ে সম্পর্ক গড়ে, সেখানে প্রথম ব্যাচে শতাধিক সদস্যকে অস্ত্র প্রশিক্ষণে পাঠায়। পরবর্তীতে ১০০ সদস্যকে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। যে গ্রুপে স্বয়ং নাথান বম এবং সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতাও ছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে ‘ইনফেন্ট্রি ও কমান্ডো’ প্রশিক্ষণের পর তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। শুরুতে তারা চুপচাপ থাকলেও কিছুদিনের মাথায় নিজেদের সক্ষমতা ও শক্তি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রশিক্ষিত কেএনএফ সদস্যরা নতুন সদস্যদের দুর্গম অঞ্চলে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে থাকে। চলতি বছরের শুরুর দিকে কেএনফের সশস্ত্র শাখা কেএনএ আত্মগোপনে চলে যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যদের (কেএনএ) প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস। দেশে ও দেশের বাইরে তারা এসব প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে থাকে। এর মধ্যে এক মাস তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাকি দুই মাস মিয়ানমারে ‘যুদ্ধ প্রশিক্ষণ’ গ্রহণ করে কেএনএ সদস্যরা। এ পর্যন্ত কেএনএফের সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা তিন থেকে চার হাজারের মতো বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী দেশের দুর্গম সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে বলেও জানা যায়।

এদিকে নাথান বমকে মাঝখানে রেখে কয়েকজনের দাঁড়ানো ছবি সংবলিত ‘লাল ডেভিড বম’ নামে একটি ফেসবুক আইডির সন্ধান পাওয়া যায়। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কয়েকটি পোস্টে নাথান বমের বিভিন্ন ভঙ্গির ছবি। সাংকেতিক বা নিজস্ব ভাষায় বেশকিছু লেখাও সেখানে পোস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে চলমান অভিযান নিয়েও বিভিন্ন ধরনের কথা বলা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে নাথান বম জাতীয় নির্বাচনে বান্দরবান ৩০০ নং আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। ওই সময়ের তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানের এই আসনের মোট জনসংখ্যা ছিল চার লাখ চার হাজার ৯৩ জন। তার মধ্যে নাথানের বম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ১১ হাজার ৬৩৭ জন।

প্রসঙ্গত, বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফ সংগঠনটি বর্তমানে কথিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদেরও সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে র‌্যাব। কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া অন্তত ৩৮ জঙ্গি বর্তমানে কেএনএফের অধীনে দুর্গম পাহাড়ে রয়েছে বলে জানানো হয়। সেই প্রেক্ষাপটে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম একটি পাহাড় ঘিরে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেখানে অনেক আগে থেকেই অন্তত চার-পাঁচটি আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য জনপদকে নানাভাবে অশান্ত রাখায় ব্যস্ত। নতুন করে কেএনএফের ভূখণ্ড আলাদা করার অপতৎপরতা এবং জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিশ্লেষকদের। -দৈনিক সময়ের আলো

লেখক. চীপ রিপোর্টার , দৈনিক সময়ের আলো।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;