বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ আনোয়ারা-বাঁশখালী'র ৩ জেলের সন্ধান মেলেনি, শোকে কাঁদছে পরিবার

বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ আনোয়ারা-বাঁশখালী'র ৩ জেলের সন্ধান মেলেনি, শোকে কাঁদছে পরিবার

আনোয়ারা প্রতিনিধি।।

ট্রলার ডুবির ঘটনায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের নিখোঁজ ৩ জেলের সন্ধান গত ৪ দিনেও মেলেনি। এসব জেলেদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

গত বুধবার(৫ আগষ্ট) সকালে সাগরে সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডের অদূরে ১২ মাঝি মাল্লা নিয়ে মাছ ধরার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে এসব জেলে নিখোঁজ হয়। জেলেদের উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানান নিখোঁজ জেলেদের পরিবার। ফিরে আসা জেলেদের সাথে কথা বলে জানাযায় ,আনোয়ারা উপজেলার গহিরা গ্রামের ইলিয়াছ ও জুইঁদন্ডী এলাকার আবুল হোসেনের মালিকানাধীন একটি মাছ ধরার ট্রলার ১২ মাঝি-মাল্লা নিয়ে গত মঙ্গলবার সকালে সাগরে মাছ ধরতে যায়।

বুধবার সকাল ৮টার দিকে বঙ্গোপসাগরের সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডের অদূরে ট্রলারটি জাল ফেলে নোঙর করে। হঠাৎ সাগরে নিন্ম চাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারের ১২ জনমাঝি-মাল্লার মধ্যে ৯ জনকে পাশবর্তী অন্য ট্রলারের জেলেরা জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ৩ জনকে উদ্ধার করতে পারেনি।

নিখোঁজ জেলেরা হলেন আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের খুরুসকুল গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩৫), একই ইউনিয়নের জুঁইদন্ডী গ্রামের মোহাম্মদ বাঁশির ছেলে কফিল উদ্দিন (৩০)। অপর জন বাঁশখালী উপজেলার হাটখালী এলাকার বাসিন্দা। তবে তার নাম জানা যায়নি।

শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, নিখোঁজ কফিল উদ্দিনের বৃদ্ধ মা জরিমন খাতুনের (৬০) আহাজারি থামছেনা। কাওকে দেখলেই ছেলে কখন আসবে জিজ্ঞাস করছে। কফিলের ১ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে আসমা আক্তার (৫) ফেলফেল চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।

কফিলের স্ত্রী কুনছুমা বেগম (২৭) জানান, পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে স্বামীই এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বোটের মালিক একবার এসে দেড় হাজার টাকা দিয়ে যায়, আর কেউ তাদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি। নিজের কোন বাড়ি ঘর নেই, ভাড়া বাসায় থাকে। ছোট ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধ মা-দাদাকে নিয়ে এখন তারা দিশেহারা।নিখোঁজ জেলে রফিকের পরিবারে স্ত্রী ও ২ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে বলে জানা যায়। এসব পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি জহির উদ্দিন জানান,আমরা সাগরে জাল ফেলে টানার সময় হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় নিখোঁজ ৩ জন ট্রলারের কেবিনের ভেতরে ছিলেন। পরে আমরা সাঁতরে অন্য একটি ট্রলারে উঠলেও তারা ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদেরকে অনেক খোঁজা খুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক আবুল হোসেনের দুইটি মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম চৌধুরী খোকা জানান, নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে নৌ-বাহিনীর সহযোগীতা নেয়া প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্থত পরিবার গুলো অত্যন্ত গরিব। এসব পরিবারের জন্য মৎস্য অফিস থেকে অর্থ-সহায়তা প্রদান করতে হবে।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ জানান, সাগরে ট্রলার ডুবিতে জেলে নিখোঁজের ঘটনায় ট্রলারের মালিক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে। পুলিশ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সাথে কথা বলে এসেছে। এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।