পেঁয়াজ নিয়ে খেলছে লোভী ব্যবসায়ীরা

পেঁয়াজ নিয়ে খেলছে লোভী ব্যবসায়ীরা

এসএম আলমগীর ।। 

বেশ ভালোই খেলা শুরু করেছে পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা। সরকারের আমদানির ঘোষণায় দাম কিছুটা কমিয়েছিল তারা। কিন্তু যখনই দেখলেন সরকার বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছে না এবং অল্প-বিস্তর  যা আনছে তাতে বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলছে না-তাই তারা আবার দাম বাড়ানো শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা যেটুকু দাম কমিয়েছিল, সেটুকু আবার বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কমেও আবার আগের দামে ফিরে যাচ্ছে পেঁয়াজ।

গত দুই মাস ধরে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে কষ্ট পাচ্ছে দেশের মানুষ। এ সময়ের মধ্যে কখনও দাম বাড়ছে আবার কখনও কিছুটা কমছে। সবশেষ ২৭০ টাকা কেজি পর্যন্ত দাম বেড়ে যায় পেঁয়াজের। এ অবস্থায় সঙ্কট কাটাতে সরকার তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। সরকারি উদ্যোগ নেওয়ায় কমতে থাকে দাম। একই সঙ্গে দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় তার প্রভাবও পড়ে। এতে পেঁয়াজের দাম কমে ১৬০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে হঠাৎ করে গত দুই দিন ধরে পেঁয়াজের দাম আবারও ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছে।

এ অবস্থায় পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরায়ও দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা, মিসর ও চায়নার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খ্যাত শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায়, মিসরের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৪ টাকায়, চায়না পেঁয়াজ ১০০ টাকায়, পাকিস্তান থেকে প্লেনযোগে আসা পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, মিসরের পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৬ টাকায়, চায়না পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে।

এ ছাড়া কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারসহ অন্য খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, মিসরের পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, চায়না পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। তা ছাড়া এসব বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, গাছসহ পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

শ্যামবাজারের আমদানিকারক পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, বাজারে আমদানি না থাকায় দাম বেশি। এর আগে ভারতের পেঁয়াজ সরবরাহ বেশি ছিল তাই দাম কম ছিল, এখন সেটা নেই। তা ছাড়া প্লেনযোগে আসা পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম বেশি। আমদানি বেশি হলে দাম কমে আসবে।
একই কথা বলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী খালেক মিয়া। এ ব্যবসায়ী বলে, পাইকারি বাজারে পাকিস্তানি পেঁয়াজ এলেও দাম অনেক বেশি। আমদানি পেঁয়াজের দাম কম হলে বাজারে সব পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। তবে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসছে, কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলে দাম কমে আসবে।

অন্যদিকে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় অব্যাহত রয়েছে সারা দেশে টিসিবির খোলা বাজারে ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি। দীর্ঘ সময় ধরে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। প্রতিদিন একেকটি ট্রাকযোগে এক হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি অব্যাহত থাকবে বলে জানান টিসিবির কর্মকর্তারা। তবে টিসিবি চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য পেঁয়াজ বিক্রি করায় তা বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলছে না।

সিটি গ্রুপ পেঁয়াজ আনছে তুরস্ক থেকে এদিকে শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভোক্তা সাধারণে চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে সিটি গ্রুপ তুরস্ক থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। সিটি গ্রুপ প্রাথমিক পর্যায়ে ২ হাজার ৫২০ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। সিটি গ্রুপের আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রথম চালান ইতোমধ্যে তার্কিস এয়ার লাইন্সযোগে গত ২২ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে এবং তা যথারীতি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় চালান আকাশপথে দেশে পৌঁছাবে আগামীকাল সোমবার। এ ছাড়া তুরস্ক থেকে সমুদ্রপথে ২ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজের একটি চালান ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর হয়ে দেশের পথে রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এগুলো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পৌঁছানোর কথা। আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত খালাস করে সরবরাহের সব ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

পেঁয়াজ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ে আজ তিন মন্ত্রীর বৈঠক
এদিকে পেঁয়াজসহ চাল, ডাল, তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, মজুদ পরিস্থিতি ও বাজারজাত নিয়ে আজ জরুরি বৈঠকে বসবেন সরকারের তিন মন্ত্রী। দুপুর ১২টায় রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ভবনে বসবেন তারা। তিন মন্ত্রী হলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এফবিসিসিআই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।