পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের সিনেমার অবস্থান :অর্ষা

পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের সিনেমার অবস্থান :অর্ষা

বিনোদন ডেস্ক ।।

নাজিয়া হক অর্ষা। শোবিজের প্রিয়মুখ । লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার নজর কাড়েন তিনি। গত বছর দর্শকনন্দিত হয়েছে তার কাজ। বছরের শেষদিকে অর্ষাকে দেখা গেছে উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোঁসলের গাওয়া গানের ভিডিওচিত্রে। তাকে নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক ।

ডিসেম্বরে উন্মুক্ত হয়েছে আশা ভোঁসলের গাওয়া ‘চলে যাওয়া ঢেউ’ গানের ভিডিওচিত্র। গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল, সঙ্গীত আয়োজনে ছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। রুনা লায়লার ‘লিজেন্ডস ফরেভার’ মিশ্র অ্যালবামের সঙ্গে এভাবেই যুক্ত হয়েছেন অর্ষা। কেমন ছিল সে অভিজ্ঞতা? জানতে চাইলে অর্ষা তুলে ধরলেন তার জীবনের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতার কথা। অর্ষা বলেন, ‘আমাদের মেকআপ ছাড়া অডিশন দিতে হয়েছিল। গানগুলো শোনানোর পর আলোচনা করা হয় আমাদের সঙ্গে। নিশ্চিত করা হয় আমরা কাজটি করতে পারব।’

‘লিজেন্ডস ফরেভার’ অ্যালবামের গানে কে কে মডেল হবে তা আগেই প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়। তারপর একটি স্ক্রিন টেস্টের মাধ্যমে গানের মডেল হওয়ার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন অর্ষা। অর্ষা বলেন, ‘সংশ্লিষ্টরা যারা হাইপে নেই তাদের সিলেক্ট করেছেন। আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন তারা যাদের কন্টেন্টের বেশি ভিউজ হয় তাদের নিচ্ছেন না? জবাবে তারা জানালেন তারা এমন আর্টিস্ট চেয়েছেন যারা ট্রেন্ডি কিন্তু বেশি অস্থির নন, যারা দায়িত্ব পালন করবেন ঠিকঠাকভাবে।’

অর্ষা ভারতে তার কাজের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইয়াশ রাজ ফিল্মস নিয়ে আমার একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা কীভাবে আমাদের দেখে, আমাদের নিয়ে কীভাবে সে ব্যাপারগুলো জেনেছি। তারা আমাদের নিয়ে প্ল্যানও করেছে যা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। তারা ভিউজ কাউন্ট করছে না, তারা আমাদের কাজের মূল্যায়ন করছে। আশা ভোঁসলের ছেলে আমার কাজ দেখে প্রশংসা করেছেন।’

তিনি যোগ আরও করে বলেন, ‘এই ছোটখাট বিষয়গুলো প্রচারে আমি বিশ^াসী নই। কারণ আমার মনে হয় আমাদের দর্শক তা বোঝে না। আগে যেমন আমরা রাস্তায় বের হলে ফ্যানরা অটোগ্রাফ বা ফটোগ্রাফের জন্য এলে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখত। একটা ভয় কাজ করত তাদের মাঝে। এখনকার দর্শক তো ঘাড়ে হাত দিয়ে ছবি তুলতে চায়। কোনো দূরত্ব নেই, কোনো সম্মান নেই।’ অর্ষার মতে, এ সময়ে পাবলিক বুলিং অনেক বেশি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ধরেন আমি একটি শুটিংয়ে আছি। কেউ ছবি তুলতে এলে যদি বলি পাঁচ মিনিট পর তুলব, শটটা শেষ করে আসি তখন পাশের জন বলবে ভাব বেড়ে গেছে। তাই এ প্রজন্মের কাছে ভালো কিছু আশা করা বোকামি। তবে আমি চাই ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি বইয়ের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ুক। তাহলে নৈতিকতাবোধ বাড়বে।’

অর্ষার গত বছর বেশ ভালো কেটেছে। তার কয়েকটি নাটক দর্শকের মন ছুঁয়েছে। তার কাজের মধ্যে ছিল বৈচিত্র্য। এ প্রসঙ্গে অর্ষা বলেন, ‘গত বছর আমি কয়েক ধরনের কাজ করতে পেরেছি। ‘মধ্যরাতের সেবা’, ‘আনফিট’, ‘এক হৃদয়হীনা’ নাটকের জন্য বেশ সাড়া পেয়েছি। আবার ওয়েব ফিল্ম ‘দ্বিতীয় কৈশোর’, ‘সেন্ড মি ন্যুডস’-এর জন্যও দর্শক প্রশংসা করেছে। বছরের শেষ ভাগে কাজ করলাম ‘লিজেন্ডস ফরেভার’। সব মিলিয়ে গত বছর আমার জন্য আরামদায়ক গেছে।’

চলতি বছরের ব্যস্ততা সম্বন্ধে জানতে চাইলে অর্ষা বলেন, ‘বিশের শুরুতে আমার কাছে কয়েকটি ওয়েব সিরিজের অফার এসেছে। ফিচার ফিল্মের অফারও পেয়েছি। আমি এ জন্য কাজও কমিয়ে দিয়েছি। ভ্যালেন্টাইন ডে’র কিছু কাজের স্ক্রিপ্টও এসেছে। এভাবেই নতুন বছর শুরু হলো।’

অর্ষা সিনেমা নিয়ে এখনই ভাবছেন না। তিনি সময় নিতে ইচ্ছুক। অর্ষা বলেন, ‘সিনেমা নিয়ে এখন ভাবছি না। তবে আমাদের সিনেমার অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। একটা সময় আমি কনফিউজ ছিলাম, সিনেমার উন্নতি হচ্ছে না পতন হচ্ছে। আমি যেভাবে অভিনয় করি সিনেমা তার চেয়ে অন্য ধরনের। তবে এ সময়ে নাটকে যারা কাজ করছেন তাদের সিনেমাতেও দেখছি। তাই সিনেমা নিয়ে আমি আশাবাদী। হয়তো কয়েক বছর পর সিনেমা নিয়ে ভাবব।’

অর্ষা কিন্তু বড়পর্দায় কাজ করেছেন এরই মধ্যে। শাহরিয়ার নাজিম জয়ের ‘অর্পিতা’ ছবিতে দেখা গেছে তাকে। অর্ষার মতে এ কাজটি ছিল ট্রায়ালের মতো। তিনি দেখতে চেয়েছেন বড়পর্দায় কাজের ধরন। এর বাইরেও কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্যে কাজ করেছেন তিনি। অর্ষার মতে, টেলিভিশনের দর্শক কমার অন্যতম কারণ নাটক উপস্থাপনের দুর্বলতা। একই চ্যানেলে খবর, নাটক, টক শো, খেলা প্রচার হওয়ায় চ্যানেলগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকছে না। ফলে কোন চ্যানেলে কোন নাটক প্রচারিত হচ্ছে তাও বুঝতে পারছে না দর্শক। এর পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের জন্য ৪০ মিনিটের নাটক টেনে দুই ঘণ্টায় নিয়ে যাওয়া তো আছেই। অর্ষা মনে করেন ইউটিউব বা ওয়েব যুগের চাহিদা, তাই এসব মেনে নিতেই হবে। তবে অর্ষার মতে, টেলিভিশন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব এসব সমস্যা দূর করে।

জুটি প্রথা নিয়ে দর্শকের মাঝে যে আলোচনা হয় তা নিয়ে অর্ষা দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা সময়কে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য জুটির প্রয়োজন আছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা বিভিন্ন জুটি দেখতে পাই টেলিভিশন, সিনেমায়। বর্তমানে দর্শক বেশি জাজমেন্টাল, নিজের মতো করে সব বিচার করছে। মানুষ যখন ইচ্ছে তখন মতামত দিয়ে দিচ্ছে। যিনি মতামত দিচ্ছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা তো আমি জানি না, তাহলে তার কথা কেন আমি গুরুত্ব দেব? আমি জুটি প্রথার বিরুদ্ধে নই, দর্শক যদি কোন জুটিকে পছন্দ করে ফেলে তবে তাদের নিয়েই তো কাজ হবে।’

অর্ষার মতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টজনরা চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী বাছাই করতে পারেন না। তারা যাদের দেখে অভ্যস্ত তাদের নিয়েই কাজ করতে চান। এতে করে দর্শক একই শিল্পীকে বারবার দেখছে।

অর্ষা অবশ্য নিজে জুটিতে কাজ করতে পছন্দ করেন না। তিনি সবার সঙ্গে কাজ করতে চান। তার ভাষ্যমতে, ‘আমি যদি একজনের সঙ্গে কাজ করি তাহলে অন্যজনের কাছে শিখতে পারব না। আমি ঘুরে ঘুরে কাজ করতে পছন্দ করি। তবে যদি কোন জুটি দাঁড়িয়ে যায় সেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’ এদিকে অর্ষা সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘ভদ্রপাড়া’ ধারাবাহিকের দ্বিতীয় লটের কাজ। বেশ কিছুদিন পর কাজটি করলেন। টানা শুটিং করেছেন তারা। ‘সেন্ড মি ন্যুডস’ ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় সিজনের কাজ শুরু হবে চলতি বছর। আপাতত নিজেকে নতুন কাজের জন্য প্রস্তুত করেই কাটছে অর্ষার সাময়িক অবসর।