নববর্ষ পালন করুন ঘরে বসেই ,নগদ অর্থ পাবেন কর্মহীনরা: প্রধানমন্ত্রী

নববর্ষ পালন করুন ঘরে বসেই ,নগদ অর্থ পাবেন কর্মহীনরা: প্রধানমন্ত্রী
নববর্ষ পালন করুন ঘরে বসেই ,নগদ অর্থ পাবেন কর্মহীনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবে সরকার ঘোষিত দীর্ঘ ছুটি বা আংশিক লকডাউনের ফলে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাবে নগদ এককালীন অর্থ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি জানান, দিনমজুর, রিকশা বা ভ্যানচালক, মোটরশ্রমিক, নির্মাণ শ্র্রমিক, পত্রিকার হকার, হোটেল শ্র্রমিকসহ অন্যান্য পেশার এসব কর্মহীনের নামে তালিকা ব্যাংক হিসাবসহ দ্রুত তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা প্রণয়ন সম্পন্ন হলে এককালীন নগদ অর্থ সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। এই খাতে ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাংলা ১৪২৭ নববর্ষ উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। ভাষণটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সরকারি-বেসরকারি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে। করোনা সময়ে নববর্ষে ঘরে থাকার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পুরো ভাষণেই ছিল করোনা সময়ে গৃহীত প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রণোদনার বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা।

কর্মহীনদের নগদ অর্থ প্রদান ছাড়াও বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখার পাশাপাশি করোনাভাইরাসজনিত কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় গ্রহণ করা কর্মসূচিগুলোর উল্লেখ করে বলেন, সেগুলো হচ্ছে :

১. স্বল্প-আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার জন্য ৫ লাখ টন চাল এবং ১ লাখ টন গম বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মোট মূল্য ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।

২. শহরাঞ্চলে বসবাসরত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ওএমএসের আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আগামী তিন মাসে ৭৪ হাজার টন চাল এই কার্যক্রমের আওতায় বিতরণ করা হবে। এজন্য ২৫১ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।

৩. সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত ‘বয়স্ক ভাতা’ ও ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা হবে। বাজেটে এর জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৮১৫ কোটি টাকা।

৪. জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এ বাবদ সর্বমোট ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। কেউ গৃহহীন থাকবেন না।

ঘরে বসেই এবারের নববর্ষ : ঘরে বসেই এবারের নববর্ষ পালনের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করব। এ সময় কবিগুরুর কালজয়ী গানের মাধ্যমে নববর্ষকে বরণ করে বলেন, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ গেয়ে আহবান করব নতুন বছরকে। অতীতের সব জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা সামনে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাব; গড়ব আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। রাজধানীতে রমনাপার্ক, চারুকলা চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নগরীর নানা স্থান মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই দিনে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতাসহ নানা অনুষ্ঠানে গোটা দেশ মেতে ওঠে।

এবারের নববর্ষে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজসহ নানা মৌসুমি ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। প্রতিটি বাঙালি আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকেন এই উৎসব। এ বছর বিশ^ব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে পয়লা বৈশাখের বহিরাঙ্গনের সব অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে। কারণ ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস আমাদের দেশেও ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ইতঃপূর্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও জনসমাগম এড়িয়ে রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানও আমরা একইভাবে উদযাপন করব।

করোনা কাটিয়ে নতুন সূর্যের প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ^কে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় তাই বলতে চাই : মেঘ দেখ কেউ করিসনে ভয়/আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে।

করোনা চিকিৎসকদের বিশেষ সম্মানী : চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান করোনা সময়ে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে একেবারে সামনের কাতারে থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের পেশাটাই এ রকম চ্যালেঞ্জের। এই ক্রান্তিকালে মনোবল হারাবেন না। গোটা দেশবাসী আপনাদের পাশে রয়েছে। করোনার চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশবাসীর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। যেসব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন ইতোমধ্যেই তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এজন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

করোনা প্রতিরোধে প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিতদের জন্য বীমার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তা হলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা।

করোনা সময়ে রোগীরা যেন কোনোভাবেই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সুরক্ষা সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবেন এটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা। একই সঙ্গে সাধারণ রোগীরা যাতে কোনোভাবেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে নজর রাখার জন্য আমি প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি। সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিয়োজিত পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আনা-নেওয়ার কাজে এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীগণসহ জরুরি সেবা কাজে যারা নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে জাতির উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে গত ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ৩২ দিন সাধারণ ছুটি বলবৎ হয়েছে। জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোটখাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত। আমাদের আমদানি-রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাই-বোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। আমরা বিশ^ব্যবস্থার বাইরে নই। বিশে^র অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানি না, এ সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা জিডিপির ৩.৩ শতাংশ।

অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে চারটি মূল কার্যক্রম : করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আমরা চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করেছি, যা অবিলম্বে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট তিন মাসে, স্বল্পমেয়াদে-আগামী অর্থবছরে এবং মধ্যমেয়াদে-পরবর্তী তিন অর্থবছর এই তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। চারটি কার্যক্রম হচ্ছে :

১. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেওয়া হবে।

২. আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন : অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।

৩. সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে এবং

৪. মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা : অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা, যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।

শিল্পখাতের আর্থিক প্যাকেজ : করোনা সময়ে শিল্পখাতে যেসব আর্থিক প্যাকেজ গ্রহণ করা হয়েছে তা তুলে ধরে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা। এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড-ইডিএফের সুবিধা বাড়ানোর জন্য ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিমের আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকা এবং রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণসুবিধা।

কৃষি উৎপাদন জোরদার করতে হবে : দেশবাসীকে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুঃসময়ে আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা শুধু সচল রাখা নয়, আরও জোরদার করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে যাতে কোনো ধরনের খাদ্য সঙ্কট না হয়, সেজন্য আমাদের একখন্ড জমিও ফেলে রাখা চলবে না। এজন্য কৃষিসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বীজ, সার, কীটনাশকসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণের ঘাটতি যাতে না হয় এবং সময়মতো কৃষকের হাতে পৌঁছে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা যাতে উৎপাদিত বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ২ লাখ টন অতিরিক্ত ধান ক্রয় করা হবে। এজন্য অতিরিক্ত ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের কৃষি, মৎস্য, ডেইরি এবং পোল্ট্রি খাতে ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণপ্রদান করা হবে। কৃষি ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। শেখ হাসিনা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের নজরদারিতে। এ মুহূর্তে দেশে কোনো খাদ্য সঙ্কট নেই।

ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা নয় : শৃঙ্খলার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সদাশয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও দরিদ্র জনগণের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে এগিয়ে এসেছেন। তবে এসব ত্রাণসামগ্রী ও সহায়তা বিচ্ছিন্নভাবে না বিলিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে শৃঙ্খলার সঙ্গে বিতরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাবে। আমি বিত্তবানদের এই সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

আঁধার কেটে যাবে : চলমান অবস্থায় ভয় না পাওয়ার আহŸান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। ভয় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। আমাদের সবাইকে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সরকার সবসময় আপনার পাশে আছে। কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ সঙ্কটকালে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। মিডিয়াকর্মীদের প্রতি অনুরোধ, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিক তথ্য তুলে ধরে এই মহামারী মোকাবেলা করতে আমাদের সহায়তা করুন।

করোনা সময়কে অন্ধকারের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আঁধার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা এক দিন কেটে যাবেই। বৈশাখের রুদ্র রূপ আমাদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মাতিয়ে তোলে ধ্বংসের মধ্য থেকে নতুন সৃষ্টির নেশায়। বিদ্রোহী কবির ভাষায় তাই বলতে চাই : ঐ নূতনের কেতন ওরে কাল-বোশেখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর! ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন! আসছে নবীন-জীবন-হারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন! সম্মিলিতভাবে করোনাভাইরাসজনিত মহামারীকে সরকার প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।