তামিমকে নিয়ে চার বছর পর জাতীয় লিগে খেলতে নামছে চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সব ক্রিকেটাররা ফিটনেস টেস্টে সর্বোচ্চ মার্ক

তামিমকে নিয়ে চার বছর পর জাতীয় লিগে খেলতে নামছে চট্টগ্রাম

নজরুল ইসলাম।। 

দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সবচাইতে বড় আসর জাতীয় ক্রিকেট লিগ আর কদিন পরেই শুরু হচ্ছে । আর এবারের লিগে একেবারে পুরো শক্তি নিয়েই মাঠে নামছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দল। লিগের শুরু থেকেই থাকছে জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবাল। সে সাথে মোমিনুল, নাইমরাও থাকছে এবারের জাতীয় লিগে। যদিও আঙ্গুলের ইনজুরির কারণে নাইমের খেলাটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বলতে গেলে এবারে চট্টগ্রাম দল খেলবে একেবারে নতুন আঙ্গিকে। দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার আফতাব আহমেদকে। প্রথমবারের মত জাতীয় লিগে কোন দলের কোচ হলেন চট্টগ্রামের এই তারকা ক্রিকেটার। এরই মধ্যে আফতাব তার দল নিয়ে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। কাল ১০ অক্টোবর আসতে আর খুব একটা দেরি নেই। যদিও দলের সাথে অনুশীলনে যোগ দেননি তামিম। তিনি ঢাকায় অনুশীলন করছেন। আর মোমিনুল রয়েছেন শ্রীলংকা সফরে। বাকিদের নিয়ে আফতাব শুরু করেছেন তার অনুশীলন। প্রায় চার বছর পর জাতীয় লিগে খেলবেন তামিম। আর সেটা বড় সুখবর চট্টগ্রাম দলের জন্য।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার আফতাবের দলের ফিটনেস টেস্ট (যাকে বলা হচ্ছে বিপ টেস্ট) সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের স্কোয়াডে থাকা সব ক্রিকেটারই একেবারে ফুল মার্ক নিয়ে সে বিপ টেস্টে পাস করেছেন। যা সবচাইতে বেশি স্বস্তি দিচ্ছে কোচ আফতাবকে। তবে এই বিপ টেস্টে সবাইকে অবাক করেছে তামিমের পারফরম্যান্স। বিসিবির ট্রেইনাররা যেখানে ক্রিকেটারদের জন্য বিপ টেস্টের সর্বোচ্চ মার্ক নির্ধারিত করে দিয়েছে ১১ সেখানে তামিম তুলেছেন ১২.১। যা সবচাইতে বেশি খুশির খবর জাতীয় লিগের চট্টগ্রাম দল এবং সে সাথে বাংলাদেশ দলের জন্যও। আর সে তামিমকে নিয়েই জাতীয় লিগে নামছে চট্টগ্রাম। আগের দিন বিপ টেস্টের পর গতকাল দল নিয়ে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন আফতাব। দলের বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন অনুশীলনে। সাগরিকাস্থ জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলে এই অনুশীলন। আগামী ১০ অক্টোবর জাতীয় লিগের প্রথম ম্যাচে মিরপুরে ঢাকা মেট্রো দলের মুখোমুখি হচ্ছে চট্টগ্রাম।
গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিপ টেস্টে চট্টগ্রামের ১৯ ক্রিকেটারের ১৮ জনই ১১ এর উপরে স্কোর করেছে। কেবল মাত্র ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বির স্কোর ছিল ১০.৪। সবচাইতে বেশি স্কোর করেছেন দলের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ইরফান শুক্কুর। চট্টগ্রামের এই তরুণ স্কোর করেছেন ১৩.৫। যা রীতিমত রেকর্ড। এছাড়া ১২ এর উপরে স্কোর করেছেন তিন জন। তারা হলেন তাসামুল হক ১২.৩, পিনাক ঘোষ ১২.৩ এবং জসিম উদ্দিন ১২.৩। তবে সবচাইতে কম স্কোর করেছেন শরীফুল ইসলাম সৈকত। তার স্কোর ৯.৪। দলের বাকি সবার স্কোর ১১ এর উপরে। কাজেই দলের ফিটনেস নিয়ে দারুণ সন্তুষ্ট কোচ আফতাব। তিনি বলেন দলের সবার ফিটনেসের অবস্থা বেশ ভাল তাই আশা করছি নিজের শুরুটা ভাল করতে পারব। সে সাথে তামিম-মোমিনুল-নাইমদের পেলে সেটা আরো ভাল হবে আমার দলের জন্য। যতদূর জানা গেছে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা জাতীয় লিগের প্রথম দুই রাউন্ড খেলতে পারবেন। যেহেতু নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ রয়েছে সেহেতু জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও চাইছে এই জাতীয় লিগে খেলে নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে।
জাতীয় লিগের প্রথম আসরটা বাদ দিলে চট্টগ্রাম দল আর ভাল করতে পারেনি একটি আসরেও। এক সময় তাদের নেমে যেতে হয় দ্বিতীয় স্তরে। এবার সেখান থেকে আবার প্রথম স্তরে উঠে আসতে চায় চট্টগ্রাম। আর সে দায়িত্বটা বর্তেছে আফতাবের উপর। আফতাব আহমেদ জানান তার দলে বেশ কিছু ভাল পারফরমার রয়েছে। যারা কিনা নিজেদের মেলে ধরতে পারবে। আর তারা যদি নিজেদের মেলে ধরতে পারে আর সে সাথে অভিজ্ঞরা যদি নিজেদের দায়িত্বটা পালন করতে পারে তাহলে দলকে উপরের স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। দলে রয়েছে গত আসরে আলো ছড়ানো তরুণ ওপেনার সাদিকুর রহমান। এছাড়া তামিম, মোমিনুল, পিনাক ঘোষ, ইয়াসির আলি রাব্বি, ইরফান শুক্কুর, জসিম উদ্দিন, তাসামুল হকদের মত ব্যাটসম্যান। অপরদিকে নাইম হাসান, ইফতেখার সাজ্জাদ রনি, শাখাওয়াত হোসেন, কাজি কামরুল, মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদির মত বোলাররা। যাদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন টিম সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দলের নির্বাচক সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল খান জানিয়েছেন তার দল তৈরি। তবে তাকে পেস বোলিং নিয়ে একটু ভাবতে হচ্ছে। কারণ তার দলের প্রায় সব পেস বোলারই ইনজুরিতে। মিশু, হাসান মাহমুদ, হোসেন আলি এবং ইফরান এই চারজন পেসারই ইনজুরিতে। তবে তিনি আশা করছেন দ্রুত তারা সেরে উঠবে এবং দলের সাথে যোগ দেবে। অপরদিকে তাদের বিকল্প হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দুই পেসার কে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন নোমান চৌধুরী এবং মেহেদী হাসান। এছাড়া নাইম ইসলামকে নিয়েও আশাবাদি নাফিস ইকবাল। তিনি জানান, নাইম অনুশীলন শুরু করেছেন। বোলিংও করছে। হয়তো প্রথম ম্যাচ থেকেই খেলতে পারবেন নাইম। আর নাইম খেলতে না পারলেও তার বিকল্পও তৈরি করে রেখেছেন বলে জানালেন নাফিস। ইয়াসির আলি রাব্বি ফিটনেস পরীক্ষায় বিসিবির বেঁধে দেওয়া ১১ মার্ক অর্জন করতে না পারলেও তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট নাফিস। এই নির্বাচক জানান রাব্বির ফিটনেস আসলে এমনই। তাছাড়া আরো একবার পরীক্ষা নেওয়া হবে রাব্বির। তাছাড়া রাব্বি চট্টগ্রাম দলের সেরা পারফরমার। গত জাতীয় লিগেও সে ছিল লিগের সর্বোচ্চ রান স্কোরার। কাজেই তার কাছ থেকে সেরাটা পাবে দল তেমনটি আশা নাফিসের।
এবারের জাতীয় লিগে ভাল কিছুৃ করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। যদিও নিজেদের মাঠে কোন খেলা নেই চট্টগ্রামের। কারণ জাতীয় লিগের জন্য ঘোষিত চারটি ভেন্যুতে নেই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। এবারের জাতীয় লিগের জন্য চারটি ভেন্যু নির্বাচন করা হয়েছে।
এই চারটি ভেন্যু হচ্ছে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম, ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়াম, রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়াম এবং খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম। কাজেই চট্টগ্রামকে তাদের হোম ম্যাচ গুলো কোন ভেন্যুতে গিয়ে খেলতে হবে তা জানা যায়নি। তবে সে সব নিয়ে ভাবতে নারাজ চট্টগ্রামের ক্রিকেটার, কোচ এবং নির্বাচকরা। তারা চাইছে মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দিতে। আর সেটা দিতে পারলেই দলের জন্য ভাল কিছু করা সম্ভব। এদিকে দলের নতুন কোচ আফতাব আহমেদও চাইছেন তার শুরুটা ভাল করতে। আর ক্রিকেটার এবং কোচ সবার চাওয়া যদি এক হয়ে যায় তাহলে এবারের জাতীয় লিগ হতে পারে চট্টগ্রামের জন্য নতুন একটি মাইলফলক।