ঢাকায় পাঠানো হলো চট্টগ্রামের সাড়ে সাতশো নমুনা

ঢাকায় পাঠানো হলো চট্টগ্রামের সাড়ে সাতশো নমুনা

রতন বড়ুয়া ।।

ল্যাবের সংখ্যা চট্টগ্রামে বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যাও। এতে নমুনার সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। তাই পরীক্ষার সুবিধা কিছুটা বাড়লেও প্রায় কোটি মানুষের শহর চট্টগ্রামের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। যার কারণে নমুনার এ জট কমানো সম্ভবপর হচ্ছিল না।

নমুনা পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্দিষ্ট একটি সময় পর সংগৃহীত নমুনার মান কমে যায়। বিশেষ করে সাতদিন পর্যন্ত নমুনার মান ঠিক থাকে। তবে এরপর মান কমতে থাকে। মান কমে গেলে ওই নমুনার যথাযথ ফল পাওয়া নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। মোট কথা সংগৃহীত নমুনা বেশিদিন পড়ে থাকলে একসময় এর মান নষ্ট হওয়ার শঙ্কার কথাও বলছেন ল্যাব সংশ্লিষ্টরা।

সবমিলিয়ে পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা প্রায় হাজার খানেক নমুনা নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়ে বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে যেতে হয়েছে বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদকেও।

নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসার পর মঙ্গলবার রাত থেকে থেকে তিনি হোম আইসোলেশনে আছেন। তিনি একা নন, টেকনোলজিস্টসহ ল্যাবের আরো কয়েকজনের শরীরেও করোনার সংক্রমন শনাক্ত হয়েছে।

এ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘা। এমন পরিস্থিতিতে শেষমেষ সংগৃহীত সাড়ে সাতশো নমুনা বুধবার (গতকাল) রাতে ঢাকায় পাঠিয়েছে বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ। বিআইটিআইডির পরিচালক প্রফেসর ডা. এম এ হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঢাকার বিভিন্ন ল্যাবে এসব নমুনা পরীক্ষা করা হবে। তবে চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো এসব নমুনার রিপোর্ট কবে-কিভাবে পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেনি বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ।

অর্থাৎ সব নমুনার রিপোর্ট একসাথে পাওয়া যাবে, নাকি ধাপে ধাপে পাওয়া যাবে; বিষয়টি নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোন তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এম এ হাসান বলেন- এখনো এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলা হয়নি। তবে ঢাকার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। পরবর্তীতে হয়তো জানতে পারবো।

ঢাকায় পাঠানো এসব নমুনার বেশিরভাগই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বলে বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে। সর্বোচ্চ সক্ষমতায় দৈনিক আড়াইশর মতো নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ। তাঁর হাত ধরেই চট্টগ্রামে করোনার এই নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়।

তিনি বলেন, আমরা হয়তো আড়াইশর কিছু কম-বেশি নমুনা পরীক্ষা করছি। কিন্তু প্রতিদিন নতুন করে আসা নমুনার সংখ্যা তিনশ’র বেশি। এতে করে নমুনার জট কমানোর সুযোগ কোথায়। এই সংকট নিরসনে চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষার সুবিধা আরো বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ। তাঁর অভিমত- দ্রুত আরো ল্যাব স্থাপন অথবা বিদ্যমান ল্যাবগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে। নয়তো চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করেন ডা. শাকিল আহমেদ।

এদিকে, জীবাণুমুক্তকরণের লক্ষ্যে তিনদিন (২৯-৩১ মে) ল্যাব বন্ধ রাখার তথ্য জানিয়েছে বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষ। এই তিনদিন বিআইটিআইডির ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ১ জুন থেকে পুনরায় নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এম এ হাসান। ল্যাব ইনচার্জ সহ আরো কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সংগৃহীত নমুনাগুলো পরীক্ষা হচ্ছে বিআইটিআইডির ল্যাবে। চমেক হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতালে সংগ্রহ করা নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাবটি। আর ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবটি নির্ধারণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের বাইরে অন্যান্য জেলার নমুনা পরীক্ষায়।

এই তিনটি ল্যাবে সবমিলিয়ে দৈনিক পাঁচশোর কিছু কম-বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে চট্টগ্রামে। যদিও পৌনে এক কোটি মানুষের এ শহরে দৈনিক অন্তত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার নমুনা পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহবায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান এবং সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া।