জি কে শামীম বিএনপি'র যে তিন নেতাকে নিয়মিত টাকা দিতেন

জি কে শামীম বিএনপি'র যে  তিন  নেতাকে নিয়মিত টাকা দিতেন
জি কে শামীম বিএনপি'র যে তিন নে’তাকে নিয়মিত টাকা দিতেন

 জি কে শামীমের বি’রুদ্ধে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চ’ল্যকর তথ্য। গোয়েন্দা সং’স্থাগুলো প্রমাণ পেয়েছে যে যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের নারায়নগঞ্জ শাখার নেতা হলেও জি কে শামীম নিয়মিতভাবেই বিএনপিকে টাকা দিতেন। এরমধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে বিএনপির তিন নেতাকে তিনি নিয়ম করে মাসোহারা দিতেন বলে জানা গেছে।

জি কে শামীমের অফিসে র‌্যাব অভি’যান পরিচা’লনার সময় বিপুল পরি’মান টাকা, অস্ত্র’শস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে একটি খাতাও খুঁজে পায়। ওই খাতায় দেখা যায় যে, বিএনপি শীর্ষ’স্থানীয় নে’তা মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং নজরুল ইসলাম খানকে নিয়মিত বেতনের মতো টাকা দিতেন জি কে শামীম। ওই খাতাটা এখন গোয়েন্দা সংস্থা’র হাতে রয়েছে।

মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং নজরুল ইসলাম খান যে নিয়মিত টাকা পেতেন যে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে গোয়েন্দারা। এই টাকার অংকটা কোটির ঘরে বলে জানিয়েছে একটি সূ’ত্র। মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং নজরুল ইসলাম খান বাদে আর কোন নেতা জি কে শামীমের কাছ থেকে টাকা পেতেন তা নিয়েও ত’দন্ত করছেন গোয়েন্দারা।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নিকেতনে জি কে শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্স থেকে তাকে আটক করা হয়। সেখান থেকে বিপুল পরিমান টাকাও উদ্ধার হয়। শামীমের মায়ের নামেই ১৪০ কোটি টাকার এফডিআরের স’ন্ধান পেয়েছে র‍্যাব।

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে জি কে শামীম আতঙ্ক”

রাজধানীর মা’ফিয়া ঠিকা’দার জি কে শামীমকে নিয়ে আত’ঙ্কে আছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে জেলার শী’র্ষপর্যায় থেকে জি কে শামীম নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কেউ নন বলে বিবৃ’তি দেওয়া হয়েছে। তবে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে শামীমের ছবি সামা’জিক যোগা’যোগ মাধ্যমে ভা’ইরাল হয়েছে। শুক্রবার জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পরপরই তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বলে প্রচার হয়। নথিতে তার নাম না থাকলেও শূন্য প’দে তার নাম প্রস্তাব করেছিলেন জেলা সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল। কিন্তু জি কে শামীম গ্রেফতার হও’য়ার পর আবদুল হাই দা’বি করেন তিনি দলের কেউ নন।

গত বছর অসু’স্থ হয়ে হাসপা’তালে ভ’র্তি ছিলেন আবু হাসনাত শহীদ বাদল। তখন আবদুল হাই ও জি কে শামীম শহীদ বাদলকে দেখতে যান। ছ’বিতে তা দেখা গেছে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাইকে সভাপতি এবং আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘো’ষণা করা হয়। ওই কমিটি গঠনের ১৩ মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের কমি’টি অ’নুমোদন দেয় কেন্দীয় আওয়ামী লীগ। তবে এ কমিটিতে ৮টি প’দ খা’লি ছিল। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের ৮টি প’দ পূরণের লক্ষ্যে সভায় সদস্য হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগ’ঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান দিপুর নাম সর্বসম্ম’তিক্রমে গৃ’হীত হয়।

সেই সভার প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ‘সে সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ’ নে’তাদের পক্ষে কাদির, জি কে শামীম ও শরফুদ্দিনসহ আরও দুজনের নাম প্র’স্তাব করা হয়। ওই সংবাদ অনুযায়ী, জি কে শামীমকে প’দ দেওয়ার ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ অনেকেই আ’পত্তি করেন। শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া দা’বি করেছিলেন, জি কে শামীম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে স’ম্পৃক্ত। তিনি জানান, তার কাছে প্রমাণ আছে, জি কে শামীম বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের পি’এস (একান্ত স’চিব) ছিল। এ নিয়ে সভাপতির সঙ্গে শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ জেলা আওয়ামী লীগের অন্য নে’তার বাকবি’তণ্ডা হয়। ফলে কোনো সিদ্ধা’ন্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।

নারায়ণগঞ্জে সর্ব’ত্র আলোচ’না কে এই জিকে শামীম: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের মৃ’ত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জি কে শামীম। তিন ছেলে নাসিম, শামীম ও হোসাইনের মধ্যে শামীম ছিলেন দ্বিতীয়। তার বাবা ছিলেন হরহরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শামীমরা তিন ভাই-ই রাজনীতি করেন। বড় ভাই নাসিম জাতীয় পার্টি আর শামীম যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শামীম সোনারগাঁও বারদী আ’লিয়া মাদ্রা’সা থেকে এসএ’সসি ও পঞ্চমীঘাট কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে এইচএ’সসি পা’স করে ঢাকায় লেখাপড়া করতে সোনারগাঁও ত্যা’গ করেন।

তিনি ঢাকায় এসে জ’ড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তা’কাতে হয়নি। জানা যায়, ঢাকায় প্রথমে একটি মে’সে থাকতেন শামীম। সেখান থেকে ধীরে ধীরে নিজের বাড়ি গাড়িসহ অঢে’ল সম্পদের মা’লিক বনে যান তিনি। বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকায় বেড়ে ওঠা তার। সেখানে নিজ’স্ব বাহি’নী তৈরি করেন তিনি। সোনারগাঁওয়ে বাড়ি থাকলেও এখানে থাকতেন না শামীম। বাবার বাড়িতে নতুন করে ভ’বন নির্মা’ণ করেন। সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ১০ শতাংশ জমির ওপর তিনতলা বাড়ি নির্মা’ণ করেছেন তিনি। বাড়িটিতে বিলা’সবহুল আসবাবপত্র ও কোটি টাকার মালামালসহ একজন কেয়া’রটেকার থাকেন শুধু। তবে দুই দিন আগেই কেয়ার’টেকার ছুটি নিয়ে দর’জায় তা’লা দিয়ে চলে যান। এখন সু’নসান নীর’বতা ওই বাড়িটিতে।

তিনতলা বাড়ি’টি শামীম একা থাকার জন্যই তৈরি করেছেন। ভিতরে রয়েছে গাড়ি পা’র্কিংয়ের বিশা’ল ব্যব’স্থা। জানা যায়, গত রমজানের ঈদে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিলেন শামীম। ঈদের দিন কা’টিয়ে আবার তিনি ফিরে যান ঢাকায়। তবে তার সঙ্গে অ’স্ত্রসহ ৬ জন গান’ম্যান আনার বিষয়টি নজর কাড়ে এলাকা’বাসীর। স্থানীয়রা জানান, জি কে শামীম সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না তারা। তারা শুধু জানেন, তিনি ঢাকায় বড় ব্যবসা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তারা জানান, বাবার রেখে যাওয়া ১০ কানি (৩০০ শতাংশ) জমি ছাড়া এখানে আর তাদের কোনো সম্পত্তি নেই। তবে শামীম বাড়িটিতে অনেক খ’রচ করেছেন এবং ভিতরে অনেক বিলাস’বহুল আসবা’বপত্র কিনেছেন। তার ভাতিজা সনমান্দি ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার জানান, চাচা তো যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। শেষ ঈদে বাড়ি এসেছিলেন। কেয়ার’টেকার চলে গেছে দুই দিন আগে। তবে কোথায় গেছে জানি না।