দুবাইয়ে গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান , কিন্তু কে এই জিসান?
পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।
Oct 5, 2019 12:42 1391
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান । তাকে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই জিসানই রাজধানীবাসীর এক সময়কার আতঙ্কের নাম ছিলেন। তার নাম শুনলে আঁতকে উঠতেন অনেকে।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, পল্টন, মগবাজার-মালিবাগ, ফকিরাপুল, মতিঝিল এলাকায় দাবিয়ে বেড়াতেন তিনি। অভিজাত এসব এলাকার ব্যবসা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন তিনি।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসা, মাদক ব্যবসা সবই করতেন জিসান। একসময় ঢাকায় এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে উঠেছিল তার। যাদের নাম শুনলে ভয়ে তটস্ত থাকত সবাই। দিনে-দুপুরে তারা চাঁদা চেয়ে চিরকুট পাঠাত। সঙ্গে পাঠাতো কাফনের কাপড়। অনেকেই নীরবে দাবিকৃত সেই চাঁদা দিয়ে দিত। না দিলে জীবন দিতে হতো।
তাদের সন্ত্রাস, দখল, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। এক সময় এমন সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা তৈরি করে প্রশাসন তাদের নাম দিয়েছিল ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’।
জিসানের পুরো নাম জিসান আহমেদ মন্টি। ঢাকার আলোচিত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমের সঙ্গে মিলে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করতেন জিসান। এই ত্রয়ীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল আরেক ক্যাসিনো গডফাদার ইসমাইল হোসেন সম্রাটের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত এক দশকে দেশের শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর নাম তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের অন্যতম হলেন জিসান। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজধানীর গুলশান, বনানী, বাড্ডা, ফকিরাপুল, পল্ট মতিঝিলসহ বেশ কিছু অঞ্চলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ওই সব এলাকার সরকারি ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে নিয়মিত চাঁদাবাজি করতেন তিনি। ইন্টারপোল তার নামে রেড অ্যালার্ট জারি করে রেখেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে জিসান সম্পর্কে বলা আছে, তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং বিস্ফোরক বহনের অভিযোগ আছে।
২০০৩ সালে মালিবাগের একটি হোটেলে দুজন ডিবি পুলিশকে হত্যার পর আলোচনায় আসেন জিসান। এর পরেই গা ঢাকা দেন। ২০০৫ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে সে দেশ ছাড়ে বলে ধারণা করা হয়।
সূত্র জানায়, সেই সময় পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন জিসান। এর পর নিজের নাম পরিবর্তন করে আলী আকবর চৌধুরী নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঠিকানা দেখানো হয়েছে সারদা পল্লী, ঘানাইলা, মালুগ্রাম শিলচর, চাষার, আসাম। বাবার নাম হাবিবুর রহমান চৌধুরী। মায়ের নাম শাফিতুন্নেছা চৌধুরী। আর স্ত্রীর নামের স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে রিনাজ বেগম চৌধুরী। পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান দুবাই হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। দেখা গেছে, ২০০৯ সালের ৭ জুন প্রদান করা পাসপোর্টটির মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০১৯ সালের ৬ জুন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের খবর, চলতি বছরের ৬ জুন পাসপোর্টটির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর ফের ভারতীয় পাসপোর্টটি ১০ বছর মেয়াদের নবায়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুবাইয়ে শীর্ষসন্ত্রাসী জিসানের দুটি রেস্টুরেন্ট আছে; আছে গাড়ির ব্যবসাও। এসব দেখভাল করেন তার ছোট ভাই শামীম এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাকিল মাজহার। এর মধ্যে শাকিল মাজহার যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহসম্পাদক রাজিব হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এ হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে দুবাই চলে যান তিনি।
সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুই যুবলীগ নেতা জিকে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর তার (জিসানের) নাম ফের নতুন করে আলোচনায় আসে। তাদের মধ্যে একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পরে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে জিসান শামীম ও খালেদকে হত্যা করতে লোক ভাড়া করেছিলেন।
সূত্র জানায়, জিকে শামীমকে ঘিরে ঢাকা মহানগর যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে জিসানের বিরোধ তৈরি হয়। এ সিন্ডিকেটের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন আরেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বিরোধের একপর্যায়ে জিসান খুবই ক্ষুব্ধ হন তাদের ওপর। অবস্থা ভিন্ন দিকে চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় জিসানের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করেন খালেদ।
গত জুনের মাঝামাঝি সিঙ্গাপুরে যান জিকে শামীম, মহানগর যুবলীগের ওই শীর্ষ নেতা ও খালেদ। আর জিসান দুবাই থেকে সেখানে যান। সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে এলাকার একটি বিলাসবহুল হোটেলে তাদের বৈঠক হয়। যদিও বৈঠকে শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে কিলিং মিশনে অংশ নিতে দুবাই থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় জিসানের সহযোগীদের।
ঢাকার টেন্ডারবাজ জি কে শামীম গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আগে কখনো এত দেহরক্ষী রাখেননি তিনি। মূলত জিসানের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হওয়ার পর থেকে ‘ভয়ে’ বড় নিরাপত্তা টিম গঠন করেন জিকে শামীম।
সরকারের পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষসন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম জিসান। এ তালিকার অন্যরা, যারা এক সময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপাত, তাদের কেউ এখন বিদেশে, কেউবা কারাগারে।
বুধবার রাতে জিসানকে দুবাইয়ে গ্রেফতার করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) মহিউল ইসলাম বলেন, ‘ইন্টারপোলের মাধ্যমে দুবাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে। তারা জানিয়েছেন, জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মহিউল ইসলাম আরও জানান, দুবাই কর্তৃপক্ষ জিসানকে গ্রেফতারের পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
Previous Article
May 8, 2024 149
Feb 8, 2020 43
May 10, 2024 37
May 8, 2024 34
May 7, 2024 32
Aug 15, 2022 275
May 8, 2024 149
Feb 8, 2020 108
Apr 27, 2024 74
Jun 28, 2021 68
Aug 15, 2022 3143
Feb 8, 2020 2478
May 27, 2023 2394
Feb 7, 2020 1577
Sep 9, 2022 1403
May 13, 2024 12
May 12, 2024 12
May 11, 2024 14
May 10, 2024 36