আমাকে উৎখাত করে কে আসবে : শেখ হাসিনা

আমাকে উৎখাত করে কে আসবে : শেখ হাসিনা
আমাকে উৎখাত করে কে আসবে : শেখ হাসিনা

পোস্টকার্ড ডেস্ক।। 

সরকার পতনের আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক সংগঠন কাজ করছে, তারা কেন জনগণের সাড়া পায় না, সে বিষয়ে নিজের ধারণায় টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাকে সরিয়ে কাকে ক্ষমতায় আনতে চায়, সে বিষয়ে বিরোধীরা নিজেরাও জানে না, আর এটা তাদের রাজনীতির বড় দুর্বলতা। 

থাইল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দেশের রাজনীতি নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন আসে। দেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে বলে দুদিন আগে মন্তব্য করেছিলেন শেখ হাসিনা। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দুই মেরু এক হয়ে সরকারকে উৎখাত করার কথা বলছে। এই অবস্থায় আপনি জাতিকে কী বার্তা দিতে চান? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাম চলে গেছে নব্বই ডিগ্রি ঘুরে, তারা নব্বই ডিগ্রি ঘুরে গেছে আর কি। আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই, বিশেষ করে আমরা যাদের অতি বাম মনে করি, তারা সব সময় প্রগতিশীল দল, তারা খুবই গণমুখী দল ইত্যাদি ইত্যাদি। সেখানে আমার প্রশ্ন হল, ঠিক আছে, তারা আমাকে উৎখাত করবে, পরবর্তীতে কে আসবে তাহলে? সেটা কি ঠিক করতে পেরেছেন? কারা আসবে? কে আসবে? কারা দেশের জন্য কাজ করবে? তারা কাকে আনতে চায়?

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সেটা কিন্তু স্পষ্ট না, আর সেটা স্পষ্ট না বলেই কিন্তু কেউ জনগণের কোনো সাড়া পাচ্ছে না। হ্যাঁ আন্দোলন করে যাচ্ছে। কেউ বিদেশে বসে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে প্রতিদিন অনলাইনে বসে আন্দোলন সংগ্রাম করেই যাচ্ছে, নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে। সেখানেও তো প্রশ্ন আছে। যারা আন্দোলন করে করুক, আমরা তো বাধা দিচ্ছি না।

ইতিহাসের সব থেকে সুন্দর নির্বাচন ২০২৪ সালে হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেই আমরা নির্বাচন করেছি। বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনের ইতিহাসটা দেখেন, সেই পঁচাত্তরের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, ৭৭ সালের হ্যাঁ/না ভোট থেকে যতগুলো নির্বাচন, প্রত্যেকটা নির্বাচনের যদি তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন যে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রত্যেক নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার নির্বাচন হয়েছে। যেটা আমাদের দীর্ঘ দিনের লক্ষ্য ছিল, আমরা সংগ্রাম করেছি এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরাই আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, সেটা ভুলে গেলে তো চলবে না।

এবারের থাইল্যান্ড সফরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটির সঙ্গে অংশীদারত্বে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, থাইল্যান্ডে আমার সরকারি সফরটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সফর নিয়ে বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।

থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অধিকতর উন্নয়নকল্পে আমরা গঠনমূলক আলোচনা করি। এ সময় আমি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, ডিজিটালাইজড এবং জলবায়ু সহনশীল দেশে রূপান্তর এবং বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মূল্যবান অংশীদার হিসেবে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা কামনা করি।

শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে কৃষিখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে পারি। এজন্য থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করি। থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানাই। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি–রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর্যালোচনার পাশাপাশি অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়েও আলোচনা হয় বলে জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, আমি দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে বিশেষ করে, আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই–টেক পার্কে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য থাই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের রানং বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি কোস্টাল শিপিং দ্রুত চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে ঐকমত্য হয়েছে থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড উভয়ই বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমি ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করি যে, বিমসটেক এ অঞ্চলের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হতে পারে।

মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশসহ অন্যদের সবক না দিয়ে আগে নিজ দেশের দিকে নজর দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে দুই বাংলাদেশির নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তাদের দেশে যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুলি করে সাধারণ–নিরীহ মানুষগুলিকে হত্যা করা হচ্ছে, এটাতো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘরকে আগে সামলানো উচিত।

গুলিতে এবং ছুরিকাঘাতের বিভিন্ন ঘটনায় সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক রাজ্যের বাফেলেতো ভর দুপুরে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদে জানানো হবে কি না, সেই প্রশ্ন রাখা হয় সংবাদ সম্মেলনে। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, অলরেডি প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে, সেখানে আমাদের আওয়ামী লীগ খুব সোচ্চার আছে, আমাদের সহযোগী সংগঠন, এটার প্রতিবাদতো আমরা সবসময় করেই যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু প্রবাসী বাঙালি না, আমেরিকায়তো প্রতিনিয়ত মানুষ খুন করার একটা… ঘরের ভেতরে একটা বাচ্চা ছেলেকে মা ধরে রেখেছে, তাকে গুলি করে মেরে ফেলে দিল। তার অপরাধটা কী ছিল? তার হাতে একটা কাঁচি ছিল। সেই কাঁচির ভয়ে তাকে গুলি করে মারা হল। সেটা সে হয়ত খেলাধুলা বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করছিল। একজন মাজুর ব্যক্তি, যে পঙ্গু, হাঁটতে পারে না, চলতেও পারে না, সে নাকি প্রেসিডেন্টকে হুমকি দিয়েছে, ওই অবস্থায় তাকে গুলি করে হত্যা করল। আর স্কুল, বিভিন্ন শপিং মলে, রেস্তোরাঁয় অনবরত গুলি হচ্ছে, আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নাই বোধহয়, আমেরিকায় গুলি করে মানুষ না মারছে।

অন্য জায়গায় মানবাধিকারের কথা বলেও ফিলিস্তিনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের দুমুখো নীতির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এটাতো আমারও প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমরা করে আসছি। যে দুমুখো নীতি কিসের জন্য? মানুষ খুন করলে, তারপর তাদেরকে টাকাও দেওয়া হয়, অস্ত্রও দেওয়া হয় মানুষ হত্যায়। অপর জায়গায় দেখা গেল, মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার।

দেশি–বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশেওতো মানবাধিকারের কত বিরাট বিরাট প্রবক্তারা আছে, তারা এখন চুপ কেন? তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা চুপ কেন? কথা বলে না কেন? তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন। সাংবাদিক থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশের বিষয়ে অনেক সোচ্চার, এখন কেন চুপ।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চৌদ্দ দলীয় জোটের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এমন কি অনেকে বলছেন, চৌদ্দ দল থাকবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতির ভাষ্য জানতে চান সেই সাংবাদিক। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, চৌদ্দ দল তো অবশ্যই আছে। থাকবে না কেন? তাদের সাথে আমাদের সব সময়ই যোগাযোগ আছে। যোগাযোগ নেই তা তো না। এখন দু–চারজন বিক্ষিপ্তভাবে কী বলছে আমি জানি না। আমাদের যিনি সমন্বয় করেন, আমির হোসেন আমু সাহেবের ওপর দায়িত্ব দেওয়া আছে দলের পক্ষ থেকে। তিনি যোগাযোগ রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে চৌদ্দ দলের অনেকে প্রার্থী দিয়েছিল, নির্বাচন করেছে, আর নির্বাচনে জেতা না জেতা আলাদা কথা, কিন্তু আমাদের এই জোট থাকবে। এটুকু বলতে পারি, জোট শেষ হয়ে গেছে কে বলল?

শিগগিরই চৌদ্দ দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কার্যনির্বাহী বৈঠক করেছি, আমাদের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করব এবং আমি চৌদ্দ দলের সাথেও বসব। তাছাড়া অনেকের সাথে আমার নিজেরও যোগাযোগ আছে। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সবার সাথে যোগাযোগ রাখেন। যিনি সমন্বয়কারী তার সাথে তো যোগাযোগ আছেই।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;