সরকারি জায়গা দখল বেআইনি, সলিমপুরে কেউ যেন তা না করে: ড. হাছান মাহমুদ

সরকারি জায়গা দখল বেআইনি, সলিমপুরে কেউ যেন তা না করে: ড. হাছান মাহমুদ
সরকারি জায়গা দখল বেআইনি, সলিমপুরে কেউ যেন তা না করে: ড. হাছান মাহমুদ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকারি জায়গা দখল বেআইনি, সলিমপুরে নতুনভাবে যেন কেউ সরকারি জায়গা দখল না করে। 

শুক্রবার (১ জুলাই) বিকালে সীতাকুন্ডের সলিমপুরে স্থায়ী জেলখানা, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইকোপার্কসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর করার জন্য সরকারি জায়গা পরিদর্শনকালে তিনি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় একথা বলেন।

এসময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, পাহাড়-নদী-সমুদ্রের অপূর্ব সমন্বয়ে সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম শহর । কিন্তু পাহাড় কাটার কারণে ধীরে ধীরে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকাজুড়ে পাহাড় ছিল। নানা সমিতির নামে নির্বিচারে পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শহরের বর্ধিত চাহিদা নিরসনের জায়গার খুব অভাব। শহর বাড়াতে হলে হাটহাজারী পাহাড় অথবা কর্ণফুলীর ওপারে বােয়ালখালী বা পটিয়ায় যেতে হবে। এখানে ১৪শ একর খাস জমি রয়েছে। পাশের মৌজায় রয়েছে আরও ১৭শ একর।

সেনাবাহিনী নিজস্ব অর্থায়নে চট্টগ্রামে একটি আর্মি স্টেডিয়াম নির্মাণের আগ্রহের কথা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় বড় বড় কনসার্টসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান হয় আর্মি স্টেডিয়ামে। চট্টগ্রামে সেই সুযােগ নেই। এমএ আজিজ স্টেডিয়াম অনুষ্ঠান করা হলেও খেলার ক্ষতি হয়। এখানে সেনাবাহিনী আর্মি স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জায়গা দেয়া হবে ।

চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় জেলখানা স্থানান্তরের প্রয়ােজন রয়েছে। এখানে আধুনিক জেলাখানা হবে। রেডিও স্টেশন হবে। ১৪শ একর জায়গায় হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, পার্কসহ অনেক কিছু করা যাবে। এখন থেকে নতুন করে যাতে আর জায়গা দখল না হয়, কেউ যেন পাহাড় কাটতে না পারে-সেজন্য জেলা প্রশাসককে নােটিশ জারি করার অনুরােধ করেছেন ।

তিনি বলেন, জায়গা দখল বেআইনি। যারা এখানে দখল করে বসবাস করছেন তাদের পুনর্বাসন করা হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য ৬ হাজার একর জায়গা অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ঘর, মসজিদ, হাসপাতাল নির্মাণ করে দিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখানে মাত্র ১৪শ একর। এরমধ্যে ৮৮ একরে বসতি রয়েছে। বাকিটা খালি আছে। এখানেও দৃষ্টিনন্দন ঘর, মসজিদ, হাসপাতাল নির্মাণ করে পুনর্বাসন করা হবে। মানুষের অসুবিধা হয় এমন কোনাে কাজ সরকার করবে না। বসতিরা যাতে আরও ভালােভাবে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করবে সরকার।

তিনি বলেন, এখানে অনেক পাহাড় কাটা হয়েছে। বসতিদের চেয়ে পাহাড় কাটায় জড়িতদের সংখ্যা বেশি নয়। পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের নাম সরকারের খাতায় রয়েছে। আশা করবাে, এখন থেকে কেউ আর পাহাড় কাটবেন না।

মন্ত্রী আরো বলেন, পাহাড় কেটে সিডিএ বায়েজিদ রিংক রােড নির্মাণ করা সমীচীন হয়নি। বেআইনিভাবে পাহাড় কাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। এখানেও পাহাড় কাটা সমীচীন হয়নি।

চট্টগ্রামের সৌন্দর্য হচ্ছে পাহাড় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সলিমপুরেও পাহাড় অক্ষুন্ন রেখে প্রচুর বনায়ন করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পানির প্রাকৃতিক ছড়া নিজের মতাে চলতে পারার বিষয় নিশ্চিত করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, জমির তিনগুণ মূল্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য কঠিন। এখানে প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিগ্রহণের কোনাে টাকা দিতে হবে না। মিরসরাইয়ে ৩০ হাজার একর খাস জায়গায় বঙ্গবন্ধু সিটি নির্মাণ করা হয়েছে। খাস জমি না হলে তা সম্ভবপর ছিল না।

এ সময় জেলা প্রশাসক মােহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় পাহাড়ধসে ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মর্মান্তিক মৃত্যু আমরা আর চাই না।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে প্রত্যেক গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের ঘােষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। এখানেও হাইকোর্টের নির্দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন বসতিদের পুনর্বাসন করা হবে।

সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে পুনর্বাসন করা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নেই। এখানে হার্ট ফাউণ্ডেশন হাসপাতাল হবে। কেন্দ্রীয় কারাগার, আর্মি স্টেডিয়াম, ইকোপার্ক, স্পাের্টস ভিলেজ, নান্দনিক মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে শহরের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করা হবে।

সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম শহর গড়ে তােলার জন্য নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। হার্ট ফাউণ্ডেশনের হাসপাতালের সঙ্গে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের দাবি করেছেন তিনি। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম শহর গড়ে তােলার লক্ষ্যে এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটি স্টেডিয়াম ও কনভেনশন হলও নির্মাণ করা যেতে পারে।

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ নাজমুল আহসান ও স্থপতি মনজুর কাদের প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এডিসি নাজমুল আহসান বলেন, ৫ মৌজায় সােয়া ১৪শ একর জায়গা রয়েছে। পাহাড় কেটে ১৫ হাজার অবৈধ অধিবাসী বসতি গড়ে তুলেছেন। পাহাড়ি ছড়া কেটেও বসতি গড়ে ওঠেছে। তাই এখানে জলাবদ্ধতা ও ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে পাহড়িধসে তিনজন শিশুসহ ৫ জন মারা যান।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় আধুনিক কারাগার, আইকনিক মসজিদ, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বেতারকেন্দ্র, ইকো পার্কসহ সরকারি দপ্তরের ৮টি দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাে. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সলিমপুরের এক অংশে রয়েছে ১৪শ একর জমি। আরেক পাশে আছে ১৭শ একর। পাহাড়-সমতল ও সবুজে ঘেরা সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে শহরের ভেতরে হবে আরেকটি শহর।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;