সীতাকুণ্ডের গফুর শাহ্ (রহ.) জামে মসজিদ, গভীর জঙ্গলে বাছুর খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কৃত অলৌকিক মসজিদ

সীতাকুণ্ডের গফুর শাহ্ (রহ.) জামে মসজিদ, গভীর জঙ্গলে বাছুর খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কৃত অলৌকিক মসজিদ
সীতাকুণ্ডের গফুর শাহ্ (রহ.) জামে মসজিদ, গভীর জঙ্গলে বাছুর খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কৃত নামাজের স্থান

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

কৃষক আবদুল গফুর সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামে বসবাস করতেন । একদিন নিজের গরুর বাছুর নিয়ে পাহাড়ে যান। সেখানে বাছুরটিকে ঘাস খাওয়াতে ছেড়ে দিলে এক পর্যায়ে সেটি পাহাড়ে হারিয়ে যায়। আবদুল গফুর টানা কয়েকদিন বাছুরটিকে খুঁজেও পাননি। শেষে বাছুরটি বাঘ বা কোন জন্তু খেয়েছে মনে করে পাবার আশা ছেড়ে দেন। কিন্তু ফেরার পথে গভীর জঙ্গল থেকে বাছুরটির ডাক শুনতে পান এবং সেদিকে ছুটে যান। পরে গভীর জঙ্গলে বাছুরটি দেখতে পেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখেন সেখানে একটি নামাজ পড়ার স্থান !

এত গভীর জঙ্গলে যেখানে এলাকার কেউই কোনদিন যায়নি, সেখানে কে নামাজ পড়েন নিয়মিত- এমন প্রশ্ন জাগে মনে। এতে উদাসীন হয়ে উঠেন গফুর। পরে সেখানেই নামাজ আদায় করেন এবং বাঁশ ও বেড়া দিয়ে একটি মসজিদ তৈরি করেন। এরপর বাড়ি ফিরে আসলেও গফুরের ভেতরে এক আধ্যাত্মিক পরিবর্তন দেখা দেয়। তিনি নির্ভয়ে রাত দিন ঐ পাহাড়ি গভীর জঙ্গলে গিয়ে নামাজ আদায় করতে থাকেন। সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে উঠেন তিনি।

তখন থেকে আবদুল গফুরকে মানুষ সম্মানসূচক ‘আউলিয়া গফুর শাহ (রহ.)’ বলে সম্বোধন করতে থাকেন। কিন্তু একদিন রহস্যজনকভাবে হঠাৎ উদাও হয়ে যান গফুর। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এরপর থেকে সেই পাহাড় থেকে গায়েবি আজানের আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। প্রত্যেক নামাজের সময় দূরের পাহাড় থেকে আজানের ধ্বনি আসছে দেখে এলাকার মানুষও উদ্বুদ্ধ হতে থাকেন। এরপর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেখানে গড়ে উঠে আরো বড় মসজিদ। এই মসজিদটির নাম দেয়া হয় গফুর শাহ্ (রহ.) জামে মসজিদ।

স্থানীয়রা জানান, গফুর শাহ উধাও হয়ে যাবার পরও ঐ মসজিদ থেকে গায়েবি আজানের ধ্বনি শুনতে পেতেন এলাকার মানুষ। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা ছুটে আসতে থাকেন। এছাড়া মনের আশা পূরণ হবে এ বিশ্বাসে আসতে থাকে অন্যান্য ধর্মের মানুষও।

সরেজমিনে ঐ মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৪ হাজার ফুট জায়গার উপর ৪০টি সুদৃশ্য পিলার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে গফুর শাহ (রহ.) জামে মসজিদ। দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদে প্রতিদিন হাজারো মুসল্লী নামাজ আদায় করেন। কিন্তু এ মসজিদটি স্থাপনের প্রকৃত সময়কাল নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ জানান, গফুর শাহ কর্তৃক এ মসজিদ স্থাপিত হয়েছিলো ২শ বছর আগে। আবার কেউ মনে করেন ৩শ বছরেরও আগে এই মসজিদ স্থাপিত হয়েছিলো।

ঐ এলাকার বাসিন্দা মুসল্লি মো. আব্দুল হক বলেন, ২শ কিংবা ৩শ বছর আগের কোন এক সময় এই মসজিদ স্থাপিত বলে এলাকায় মতভেদ থাকলেও গফুর শাহ (রহ.) এর অলৌকিক ঘটনাগুলো নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। আমরা বংশানুক্রমে এই ইতিহাস শুনে আসছি। এখনো এই মসজিদে কেউ কোন মনোবাসনা নিয়ে আসলে তা পূরণ হয়ে যায়। এ কারণেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে ছুটে আসেন। বর্তমানে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি এই মসজিদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন বলেন, বাবা-দাদাদের কাছ থেকে আমরা গফুর শাহ (রহ.)’র কাহিনী শুনে আসছি। তিনি একজন বড় মাপের অলি ছিলেন। মসজিদের জায়গা মানুষকে চিনিয়ে দিয়ে তিনি উধাও হয়ে যান। এরপর অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে এখানে। অনেক মানুষের মনের আশা পূরণ হয়েছে। তাই তার নামেই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;