লকডাউনে উত্তর কাট্টলীতে মিলেছে সুফল,কমেছে সংক্রমণ

লকডাউনে উত্তর কাট্টলীতে মিলেছে সুফল,কমেছে সংক্রমণ

মোরশেদ তালুকদার।।

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড সংক্রমিতের হার কমে আসায় এখন ইয়েলো জোন ক্যাটাগরিতে চলে এসেছে। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো সে ঘোষণা দেয়নি চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। এর আগে রেড জোন ঘোষণা করে ওয়ার্ডটিতে লকডাউন কার্যকর করা হয়। আগামী মঙ্গলবার শেষ হবে ২১ দিনের এই লকডাউন। নির্ধারিত সময়ের আগেই লকডাউনের সুফল মিলেছে। ফলে বুধবার থেকে লকডাউনের আওতামুক্ত হচ্ছে ওয়ার্ডটি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত ২১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা শনাক্ত হয়েছেন মাত্র ১৬ জন, যা ওয়ার্ডটির মোট জনসংখ্যার অনুপাতের হিসেবে ৫৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে প্রতি লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বশেষ ১৪ দিনে ৩-৫৯ জন সংক্রমিত হওয়া এলাকাকে ইয়েলো জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড এখন ইয়েলো জোনে অবস্থান করছে।

এর আগে গত ১৩ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে প্রতি লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বশেষ ১৪ দিনে ৬০ জন সংক্রমিত হওয়া এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করেছে করোনা প্রতিরোধে সেন্ট্রাল কমিটি। ওই দিন পর্যন্ত সর্বশেষ ১৪ দিনে উত্তর কাট্টলীতে করোনা সংক্রমিত ছিলেন ১০১ জন, যা প্রতি লাখ জনসংখ্যার হিসাবে ১৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ওয়ার্ডটির মোট জনসংখ্যা ৮০ হাজার ২৯০ জন। লকডাউন কার্যকরের আগে উত্তর কাট্টলীতে সংক্রমিতদের মধ্যে ৯৮ জন সুস্থ হয়েছেন এবং তিনজন মারা গেছেন। লকডাউনের সুফল সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আশাব্যঞ্জক। সেখানে আক্রান্তের হার লাখে ১৪৫ শতাংশ ছিল। সর্বশেষ জরিপে তা ৫৯-এ চলে এসেছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর ২১৫টা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে পজিটিভ ১৬ জন। সেই হিসেবে বলা যায়, লকডাউনের সুফল দৃশ্যমান। তবে ২১ দিন পূর্ণ হলেই আমরা পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেব। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে কয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩৮ জন শনাক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৬ জুন সিভিল সার্জন প্রজ্ঞাপন জারি করে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করে। ওইদিন রাত ১২টায় অর্থাৎ ১৭ জুন থেকে কার্যকর করা হয় লকডাউন। সিটি কর্পোরেশন লকডাউনের সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। সংস্থাটির উদ্যোগে বন্ধ করা হয় ওয়ার্ডের ১৪টি প্রবেশ পথ। এছাড়া খোলা হয় কন্ট্রোল রুম, যেখানে ফোন করলে স্থানীয়দের প্রত্যাশিত সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকায় ছয় হাজার পরিবারে বিতরণ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পরিবারে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। দৈনিক ৪ মণ মাছও বিতরণ করেন তিনি। সেখনে দায়িত্ব পালন করেন ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক। এর মধ্যে ১৭ জন ছিলেন প্রশিক্ষিত। তারা করোনা শনাক্তদের সংস্পর্শে আসা ৩৮ জনকে চিহ্নিত করে আইসোলেশনে পাঠান। এছাড়া ওয়ার্ডটিতে জেলা প্রশাসন নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অহেতুক বাইরে ঘোরাফেরাকারীদের আইনের আওতায় আনে। এছাড়া সিএমপির সাতটি টিম দায়িত্ব পালন করে। টহল দেয় সেনাবাহিনীও।

লকডাউনের সুফল সম্পর্কে স্থানীয় কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, সংক্রমণ কমে আসছে-এটা অবশ্যই সুফল। যে উদ্দেশ্যে লকডাউন করা সেটার প্রতিফলন হয়েছে। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। তবে লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কষ্ট হলেও আমরা সফল হয়েছি বলা যায়।

তিনি বলেন, এ ওয়ার্ডে আছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন এবং বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস। অবশ্য তাদের বুঝিয়ে বন্ধ রাখতে পেরেছি। দোকানপাট সবকিছু বন্ধ ছিল। মানুষকে বুঝিয়েছি ঘরে থাকার জন্য। তারা সহযোগিতা করেছেন। তিনি জানান, ১০৫টি ভ্যানগাড়ি দিয়ে স্থানীয়দের নিত্যপণ্য হোম ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। যাদের প্রয়োজন হয়েছে বিনামূল্যে অঙিজেন সরবরাহ করেছি। সিটি কর্পোরেশনের দুটি এবং আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়েও সার্বক্ষণিক সেবা দিয়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহেদ আকবর বলেন, আক্রান্তের হার কমে এসেছে। এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ২৪ ঘণ্টায় পেয়েছে এলাকার মানুষ। ফলে রোগ বুঝে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়েছে। এতে কোনটি ভাইরাস, ফ্লু, কাশি, ডেঙ্গু জ্বর বা কোনটি কোভিড রোগ নির্ণয় করা সহজ ছিল। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাইমন নামে এক বাসিন্দা বলেন, মানুষের মধ্যে অহেতুক বাইরে ঘোরাফেরা করার প্রবণতা কমেছে। কিছু মানুষ ইচ্ছেমতো চলেছে। তাদের মধ্যে লকডাউনের বিধি নিষেধ মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। তবে সার্বিকভাবে সংক্রমিতের হার কমে আসা বড় পাওয়া।

উল্লেখ্য, ১৩ জুন করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির দ্বিতীয় সভায় উত্তর কাট্টলীসহ চসিকের ১০টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উত্তর কাট্টলী ছাড়া অন্য ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১৪ নং লালখান বাজার, ১৬ নং চকবাজার, ২০ নং দেওয়ান বাজার, ২১ নং জামালখান, ২২ নং এনায়েত বাজার, ২৬ নং উত্তর হালিশহর, ৩৭ নং উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ও ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর। ১০টি ওয়ার্ডের তালিকা চট্টগ্রাম শহরে করোনা প্রতিরোধে গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে প্রেরণ করে লকডাউন কার্যকর করতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে ১৪ জুন টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে বৈঠকে বসে ব্যবস্থাপনা কমিটি। লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত দেন কমিটির সভাপতি সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন।