রান্নার সিলিন্ডারে চলছে সিএনজি ট্যাক্সি,ভয়াবহ বিস্ফোরণ যে কোনো মুহূর্তে

রান্নার সিলিন্ডারে চলছে সিএনজি ট্যাক্সি,ভয়াবহ বিস্ফোরণ যে কোনো মুহূর্তে

ইকবাল ফারুক, চকরিয়া ।। 

রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডারকে স্থানীয় প্রযুক্তিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই লাগিয়েই কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে চলছে সিএনজি ট্যাক্সি। প্রতিদিন দুই উপজেলার অন্তত ২০-২৫টি ছোট বড় অভ্যন্তরীণ সড়কে প্রায় দুই হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। এলপিজি কনভারশন না করে স্থানীয় প্রযুক্তিতে ট্যাক্সিতে সিলিন্ডার লাগিয়ে চালানোর কারণে গাড়িগুলো হয়ে উঠেছে ‘চলন্ত বোমা’। যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটে চালক ও যাত্রীরা হতাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় সিএনজি চালকরা বলছেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ব্যবহৃত স্থায়ী কোনো সিএনজি ফিলিং স্টেশন নেই। এছাড়া এলপিজি গ্যাস দামেও অনেক সস্তা। তাই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ব্যবহৃত গ্যাস সংকট আর জ্বালানি খরচ কমাতে ঝুঁকি নিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে তারা গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের পথ বেছে নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ২০-২৫টি ছোট বড় অভ্যন্তরীণ সড়কে প্রতিদিন দুই সহস্রাধিক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা-বদরখালী, চিরিংগা-জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর, চিরিংগা-কৈয়ারবিল, চিরিংগা-বেতুয়াবাজার-বহদ্দারকাটা, বানিয়ারছড়া-শান্তিরবাজার-পহরচান্দা, বানিয়ারছড়া-ফাইতং, হারবাং-পহরচান্দা, বরইতলী একতাবাজার নতুন রাস্তার মাথা-পেকুয়া-মগনানা ও টৈটং সড়কে এবং পেকুয়া উপজেলার এবিসি সড়কসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে এসব সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। কিন্তু চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ব্যবহৃত গ্যাসের স্থায়ী কোন ফিলিং স্টেশন না থাকায় এসব সিএনজি চালকরা তাদের গাড়িতে সিএনজি গ্যাস সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। ফলে এ বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে এবং জ্বালানি খরচ বাঁচানোর অজুহাতে চরম ঝঁকিপূর্ণ হলেও জীবন জীবিকার তাগিদে তারা গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করেই চালাচ্ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

উপজেলার হারবাং ইউনিয়ের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশা চালক সুমন। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি এ পেশায় নিয়োজিত। বরইতলী একতা বাজার নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ওই সিএনজি অটোরিকশা চালকের। তিনি বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের শুরু থেকেই দুই উপজেলায় স্থায়ী কোন সিএনজি ফিলিং স্টেশন না থাকায় চকরিয়া-পেকুয়া-বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফলী থানার নতুনব্রিজ এলাকা থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে গাড়ি চালাতে হতো সিএনজি অটোরিকশা চালকদের। এ দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গাড়িতে সিএনজি গ্যাস সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনার পাশাপাশি চালকরা পুলিশ ও নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠনকে চাঁদা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতেন। পরবর্তীতে দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কয়েকজন ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ পন্থায় সিএনজিচালিত গ্যাস এনে তা সিএনজি অটোরিকশা চালকদের কাছে বিক্রি করলে সিএনজি চালকরা চট্টগ্রাম থেকে গ্যাস না এনে স্থানীয়ভাবে সিএনজি গ্যাস বিক্রেতাদের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু এসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা সিএনজি গ্যাসের মূল্যে শহরের মূল্যের চেয়ে লিটার প্রতি ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি হওয়ায় চালকরা একসময় তা থেকেও বিমুখ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে চালকরা তাদের গাড়িতে জ¦ালানি খরচ সাশ্রয়ী করার অজুহাতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়েই চালাচ্ছেন তাদের সিএনজিচালিত অটোরিকশা। বরইতলী একতা বাজার-পেকুয়া-মগনামা-টৈটং সড়ক, চিরিংগা-বদরখালী সড়ক, চিরিংগা-কাকারা-মানিকপুর সড়ক ও চিরিংগা-কৈয়াবিল সড়কসহ চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা চালক মানিক, রুহুল কাদের ও নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য বেশ কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশাা চালকও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।

চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও চকরিয়ায় কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ সিএনজি অটোরিকশায় আসল সিলিন্ডারের পরিবর্তে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশাগুলোর পেছনের সিটের পাশে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বসিয়ে রাখা হয়। অথচ এই গ্যাস মূলতঃ বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নার কাজেই ব্যবহৃত হয়। এসব সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটার গ্যাস পরিবর্তনের বার বার খোলা বাধার কারণে ও ত্রূটিপূর্ণ সংযোগ দিয়ে গ্যাস লিক করে এবং আলগাভাবে সিলিন্ডার বসানোর কারণে গাড়ি চালানোর সময় ঝাঁকুনিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। বিষয়টির ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত মাসের উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। চকরিয়া উপজেলায় কয়টি সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক (টমটম) রয়েছে তার তালিকা প্রস্তত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুত্র. দৈনিক পূর্বদেশ