রক্ষা পাচ্ছে সিআরবি, হাসপাতাল হবে সীতাকুণ্ডের কুমিরায়!

রক্ষা পাচ্ছে সিআরবি, হাসপাতাল হবে সীতাকুণ্ডের কুমিরায়!
রক্ষা পাচ্ছে সিআরবি, হাসপাতাল হবে সীতাকুণ্ডের কুমিরায়!

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রামের সিআরবি অবশেষে রক্ষা পেতে যাচ্ছে। নগরীর ফুসফুস খ্যাত সবুজে ঘেরা এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসার ফল পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী। রেলওয়ে প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় এখানে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে। আর মাঠ পর্যায়ে নির্মাণের কাজ শুরুর সাথে সাথেই চট্টগ্রামের সচেতন নাগিরক সমাজ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তীব্র বিরােধিতার মুখে সিআরবির বিকল্প হতে যাচ্ছে কুমিরার রেলের জায়গা। রেলপথ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২০তম সভায় সিআরবির বিকল্প হিসেবে কুমিরার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে কৱিম এমপি বলেন, “সিআরবিতে হাসপাতাল হউক এটা যেহেতু চট্টগ্রামবাসী চায়না। কিন্তু চট্টগ্রামের জন্য আধুনিক হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে। তাই হাসপাতালের জন্য বিকল্প স্থান প্রয়োজঁন। আমরা বিকল্প হিসেবে কুমিরার নাম প্রস্তাব করেছি।' তাহলে কি সিআরবির পরিবৰ্তে কুমিৱায় হাসপাতালটি নির্মিত হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এবিএম ফজলে করিম বলেন, কোথায় নির্মিত হবে সেই সিদ্ধান্ত দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু সিআরবিতে হাসপাতাল নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে তাই আমরা এর বিকল্প স্থান নির্ধারণ করেছি।' কুমিরা কোথায় জায়গা রয়েছে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী। বলেন, 'কুমিরা রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীতে পাহাড়ের উপরে রেলওয়ের একটি যক্ষা হাসপাতাল ছিল। প্রায় ৩০ বছর আগে থেকে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সংসদীয় কমিটি সেখানে থাকা প্রায় ১৩ একর জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বিকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছে। সিআরবির বিকল্প হিসেবে এই স্থানটিকে বেছে নেয়া হয়েছে।'

এদিকে সম্প্রতি কুমিরা যক্ষা (বক্ষব্যাধি) হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ের উপরের এই হাসপাতালটি লােকালয় থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। হাসপাতালের কোনাে দরজা জানালা নেই। মানুষজন ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন অংশ নিয়ে গেছে। এখান থেকে দখিনা বাতাস উপভােগ করা যায়। পশ্চিনে সাগরের বিশাল জলরাশি দেখা যায়। আর পূর্ব দিকে রয়েছে বিশাল পাহাড়ি এলাকা। ১৯৫৫ সালে ৩৯ একর জায়গার উপর এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি সম্পর্কে কথা হয় পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা. আবদুল আহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদেশের রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা বক্ষব্যাধি রােগে আক্রান্ত হতো। তাদেরকে সম্পূর্ণ পৃথক (আইসােলেশন) রেখে পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে চিকিৎসা দেয়া হতাে এই হাসপাতালে। তিনি আরাে বলেন, খােলা বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে রােগীরাও স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করতাে। পরবর্তীতে বিসিজি টিকা আবিষ্কারের পর এবং বক্ষব্যাধি চিকিৎসায় সারাদেশে হাসপাতাল গড়ে উঠায় এই হাসপাতালটি ১৯৯২-৯৩ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

সংসদীয় কমিটির নতুন প্রস্তাবনার বিষয়ে কথা সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, 'এই প্রস্তাবনা আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দুই দফা লিখিত আবেদন করে জানিয়েছি চট্টগ্রামের পরিবেশের স্বার্থে সবুজে ঘেরা সিআরবিকে রক্ষার জন্য। অবশেষে তা বা পাচ্ছে বলে সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে এবং চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।'

উল্লেখ্য, টাইগারপাস, লালখানবাজার, স্টেডিয়াম, কদমতলী এলাকার মধ্যবর্তী সিআরৰি জোনটি হেরিটেজ জোন হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ করা আছে। আর হেরিটেজ জোনে কোনাে ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে সদর দপ্তরের ভবনটিও পুরাকীতি হিসেবে চিহ্নিত। শ্বাস নেওয়ার এই মনোরম জায়গাটি রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে চট্টগ্রামবাসী।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;