মাদ্রাসা পরিচালনায় তিন সদস্যের কমিটি, শূন্য থাকল মহাপরিচালকের পদ

মাদ্রাসা পরিচালনায় তিন সদস্যের কমিটি, শূন্য থাকল মহাপরিচালকের পদ

হাটহাজারী প্রতিনিধি।।   

শূন্যই থাকল হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মদ্রাসার ‘মুহতামিম’ (মহাপরিচালক) পদ। পরিচালনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করেছে মজলিশে শুরা কমিটি। এখন থেকে মাদরাসার নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনা করবে তিন সদস্যের এই পরিচালনা বোর্ড।

মাদরাসাটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী কমিটি শূরার বৈঠক বা মজলিশে শূরায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা চলে মজলিশে শূরা। এতে পরিচালনা বোর্ড গঠনের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মাদরাসার শিক্ষা সচিব ও প্রধান শায়খুল হাদীস পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া শূরায় নতুন করে ছয়জনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মাদরাসায় ‘ছাত্র আন্দোলন’ চলাকালে ভাঙচুরের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মজলিশে শূরায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

তিন সদস্যের পরিচালনা বোর্ড : মাদরাসা পরিচালনা বোর্ডে নিয়োগ পাওয়া তিন সদস্য হচ্ছেন হাটহাজারী মাদরাসার প্রধান মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী, মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ ও মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ইয়াহইয়া।

বৈঠকে উপস্থিত শূরা সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মজলিশে শূরায় মাদরাসার পরিচালনার বিষয় নিয়ে নানা আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কেউ এককভাবে কাউকে মুহতামিম বা পরিচালক নিয়োগের সুপারিশ করেন। এক্ষেত্রে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। পরে উপস্থিত সদস্যরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেন, মাদ্রাসার সকল নির্বাহী কার্যক্রম গঠিত পরিচালনা বোর্ডের তিন সদস্যের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পরিচালিত হবে। কোনো বিষয়ে তাঁদের কেউ এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

শূরায় নতুন ৬ সদস্য : নতুন করে গতকাল ৬ জনকে মজলিশে শূরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরা হচ্ছেন সারিয়ার মাওলানা আবদুল্লাহ, বাথুয়ার মাওলানা আহমদ শফী, রাঙ্গুনিয়ার হাফেজ সৈয়দ হোসাইন, হেফাজত ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, ঢাকার মুফতি আবদুল মালেক এবং ঢাকার মাদানী নগরের মাওলানা ফরিদ উল্লাহ।

অনুপস্থিত ছিলেন চার সদস্য : হাটহাজারী মাদরাসার সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী কমিটি ‘মজলিশে শূরা’ গঠনকালে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭ জন। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে মারা যান ৬ জন। সর্বশেষ ১১ সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার মারা যান আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কিছুদিন আগে মারা যান আরেক সদস্য আবুল হাসান (কক্সবাজার)। বাকি নয়জনের মধ্যে গতকাল চারজন উপস্থিত ছিলেন না। তবে অনুপস্থিত দুজন মুঠোফোনে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন এবং পরিচালনা বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছেন। এরা হচ্ছেন মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী ও ফেনীর মাওলানা আবুল কাশেম। এছাড়া অনুপস্থিত ছিলেন শূরা কমিটির সদস্য ও রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মুফতি মাওলানা নুরুল আমীন এবং মাওলানা আবদুল কুদ্দুস।

উপস্থিত ছিলেন মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা নোমান ফয়জী, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী ও সোয়াইব নোমানী।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি : গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় ‘ছাত্র আন্দোলনে’ শিক্ষকদের কক্ষ ভাঙচুর ও ‘লুটপাট’ এর ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মজলিশে শূরা। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন মাওলানা শেখ আহমদ, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা ওমর, মাওলানা ইয়হইয়া মাহমুদ ও মুফতি জসিম উদ্দিন।

মুহতামিম পদটা শূন্য থাকল : ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম পদে নিয়োগ পান মাওলানা শাহ আহমদ শফী। ১৭ সেপ্টেম্বর উদ্ভূত পরিস্থিতির পর মাদরাসার সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী কমিটি মজলিশে শূরার বৈঠকে মুহতামিম পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে মারা যান তিনি। তবে মুহতামিম পদ নিয়ে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে নানা আলোচনা চলে আসছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত মজলিশে শূরায় আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীকে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মাওলানা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন তিনি-এমন গুঞ্জন ছিল। তবে ১৭ জুন মজলিশে শূরায় তাকে মাদরাসার সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে শেখ আহমদকে নিয়োগ দেওয়া হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে। ওই বৈঠকে আমৃত্যু শাহ আহমদ শফীকে মুহতামিম রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

অবশ্য এর আগে ১৬ মে হাটহাজারী মাদরাসা মসজিদে জোহর নামাজের পর উপস্থিত মুসল্লিদের সামনে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণা দেন হাটহাজারী ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাফর। তখন এর বিরোধিতা করেছিলেন আরেক পক্ষ। একইদিন রাত ৮টায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, মাদরাসার জিম্মাদারি আমি কাউকে দিই নাই। জিম্মাদার কে হবে সেটা শূরা (মজলিসে শূরা) ঠিক করবে। আমি কাউকে মুহতামিম বানাইনি, কাউকে নায়েবে মুহতামিম বানাইনি। যেগুলো শুনছেন সেগুলো গুজব, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর ‘ছাত্র আন্দোলন’ এর নামে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরপর গতকাল অনুষ্ঠিত মজলিশে শূরা থেকে মুহতামিম পদের ঘোষণা আসার প্রত্যাশা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পদটি শূন্যই থাকল। -আজাদী