বিপ্লবীদের ভাস্কর্য সুরক্ষায় চট্টগ্রামে তোড়জোড়

বিপ্লবীদের ভাস্কর্য সুরক্ষায় চট্টগ্রামে তোড়জোড়
বিপ্লবীদের ভাস্কর্য সুরক্ষায় চট্টগ্রামে তোড়জোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার পর চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্টরা।

সিসি ক্যামেরা বসানোসহ নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সতর্ক আছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জের যাত্রা মোহন সেন (জে এম সেন) হলে রয়েছে বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্য সেনসহ পাঁচজনের ভার্স্কয। আর পাহাড়তলীতে রয়েছে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভাস্কর্য।

কুষ্টিয়ার ঘটনার পর নগরীর জে এম সেন হলে ভাস্কর্যগুলোর নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। সেখানে রয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন, আইনজীবী-কংগ্রেস নেতা যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত, কংগ্রেস নেতা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নেলী সেনগুপ্তা ও রাজনীতিবিদ-সাংবাদিক মহিমচন্দ্র দাশের ভাস্কর্য।জে এম সেন হলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা দ্য চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে বলেন, ‘আমরা গত শনিবার রাতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি। ক্যামেরাগুলো খুবই পাওয়ারফুল, ছবি স্পষ্ট দেখা যায়। সিসি ক্যামেরাগুলো স্থাপন করিয়েছি যাতে ভার্স্কয এবং জে এম সেন হলের মাঠের দিকে সবকিছু আওতায় থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওনারা পরামর্শ দিয়েছেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হলে সহজেই অপরাধী শনাক্ত করা যাবে। পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে, সেখানে আমাদের গার্ড রয়েছে। পুলিশি টহলও আছে।’

এদিকে বিভিন্ন বাম সংগঠনের দাবির মুখে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবের কাছে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভাস্কর্য। সেটির নিরাপত্তা রক্ষায় পরিকল্পনা নিয়েছে নগর পুলিশ। ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ ভাস্কর্য এলাকায় রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় থাকলেও এ বিষয়ে উদাসীন রেলওয়ে। এ নিয়ে তাদের কখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

ওই এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থাপনা ঘিরে কখনো ‘পজিটিভ’ নয় রেলওয়ে। ভার্স্কযটি রক্ষায় রেলওয়ে চাইলে অনেক কিছু করতে পারত। কিন্তু তারা এ বিষয়ে সোচ্চার নয়। চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের স্মৃতিবিজড়িত সব স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি করা প্রয়োজন। না হলে ভবিষ্যতে আমাদের সব অর্জন ধুলোয় মিশে যাবে।’

ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করতে চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ করেছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা, গত রবিবার তা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী। সেখান থেকে ক্লাবের অদূরে বীরকন্যা প্রীতিলতার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এর আগে ২০১৮ সালে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন প্রীতিলতার এই ভাস্কর্যে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কেউ এলে প্রীতিলতার ভার্স্কয রক্ষায় তোড়জোড় শুরু হলেও এত বছরেও এটির নিরাপত্তা না থাকায় ক্ষুব্ধ সবাই।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুসহ বিপ্লবীদের ভাস্কর্যের নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি। যেহেতু সাম্প্রদায়িক শক্তির থাবা এখন বিপ্লবীদের ভাস্কর্যে পড়েছে। বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য রয়েছে। ওরা আমাদের পতাকাকে খামছে ধরেছে। ১০ বছর ধরে সরকারকে বলেছিলাম সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে যে ঘটনাগুলো ক্রমান্বয়ে ঘটে চলেছে, এটা টার্গেট পয়েন্ট ছিল পলিটিকস। এখন ভাস্কর্য ভাঙছে, সেদিন যদি সরকার এসব ঘটনাকে ছাড় না দিত; তাহলে আজকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রক্ষায় পুলিশ প্রহরা দিতে হতো না। বিপ্লবীদের ভাস্কর্য রক্ষার কথা চিন্তা করতে হতো না। আশা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব বিষয়ে যথাযথ নজর দেবে।’