বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিচ্ছে জেব্রা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিচ্ছে জেব্রা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ।।

চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আগত দর্শনার্থীদের বেশ আনন্দ দিচ্ছে পাচারের সময় উদ্ধারের পর এই পার্কে প্রেরণ করা জেব্রাগুলো। বিশেষ করে মা-বাবার সঙ্গে পার্ক ভ্রমণে যাওয়া কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বেশ দৃষ্টি কাড়ছে জেব্রাগুলো।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কের দর্শনার্থীদের জন্য গত বছরের জুন মাসে নতুন অতিথি হিসেবে আনা হয় একসঙ্গে তিনজোড়া আফ্রিকান জেব্রা। এসব জেব্রার আগমণে পুরো পার্ক যেন সুশোভিত হয়ে উঠে। ১৯৯৯ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে কর্তৃপক্ষের অনেক চেষ্টা ছিল আফ্রিকান প্রজাতির জেব্রা এনে দর্শনার্থীদের মনের খোরাক মেটানো। কিন্তু বরাবরের মতোই সেই আশা অপূর্ণই থেকে যায় সকলের। দীর্ঘদিন পরে হলেও এসব জেব্রাকে নতুন অতিথি হিসেবে পেয়ে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন। দর্শনার্থীদের পাশাপাশি আনন্দে উদ্বেলিত হন তারাও।
এদিকে পার্কের তিন একর জায়গায় গড়ে তোলা বেষ্টনীতে এসব জেব্রা পা ফেলার পর থেকেই তারা যেন আদর্শিক আবাসস্থল খুঁজে পায়। যেখানে এই বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের প্রচুর ঘাস, লতাগুল্মের সমাহার। বিস্তীর্ণ এই বেষ্টনীতে ঢুকেই এসব জেব্রা শুরু করে ঘাস খাওয়া। এই দৃশ্য দেখে পার্ক কর্মকর্তারা তখন বলেন, এটিই তাদের (জেব্রা) আদর্শিক আবাসস্থল।
পার্কের বন্যপ্রাণি চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পার্কে নতুন অতিথি হিসেবে ঠাঁই পাওয়া জেব্রার মধ্যে একটি জেব্রা শারিরিকভাবে দুর্বল ছিল। তাই একটি জেব্রাকে প্রাণে বাঁচিয়ে রাখা যায়নি। অবশ্য বাকী জেব্রাগুলো খুবই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে পার্কের সবুজাভ পরিবেশে।
তিনি আরো জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক এসব জেব্রার মধ্যে তিনটি রয়েছে বিপরীত লিঙ্গের। তাই এখানে যে আবাসস্থল তারা পেয়েছে প্রজননের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, এসব জেব্রা পার্কের নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে অবমুক্ত করার পর প্রচুর পরিমাণ ঘাস খাওয়া শুরু করে। এর পর তিন একরের এই বেষ্টনীর এপাশ থেকে ওপাশ চক্কর দিতে থাকে এসব জেব্রা। তন্মধ্যে একটি জেব্রা হাটু পরিমাণ পানিতে নেমে পড়লে সঙ্গীয় জেব্রাগুলো দলচ্যুত জেব্রাকে চিৎকার-চেঁচামেচি করে পাড়ে তুলে নিয়ে আসে। পার্কে আগত দর্শনার্থীরা এই দৃশ্য দেখে বেশ উৎফুল্ল হন।
কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, ‘পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতোপূর্বে অসংখ্যবার পার্ক ভ্রমণ করেছি। কিন্তু বিদেশি বন্যপ্রাণির মধ্যে ওয়াইল্ডবিস্ট ছাড়া কোন প্রাণির দেখা পাইনি। গত একবছরে বেশ কয়েকবার পার্কে এসেছি। প্রতিবারই আফ্রিকান জেব্রা দেখতে বেষ্টনীতে চলে যাই। এসব জেব্রা আমাদের মনের খোরাক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আফ্রিকান প্রজাতির এসব জেব্রা একেবারেই শান্ত স্বভাবের। তারা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। কোথাও গেলে দলবদ্ধভাবে যেতেই পছন্দ করে। এরা তৃণভোজী বন্যপ্রাণি। তাদের প্রধান খাবার হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস, ভূঁষি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পার্কের এসব জেব্রাকে অতিথি হিসেবে পেয়ে আমরাও খুশি। আমাদের চেষ্টা থাকবে এসব জেব্রা থেকে প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়ানো। আমরা সেভাবেই অগ্রসর হচ্ছি। কারণ এই পার্কটির পরিবেশ একেবারেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। তাই এসব জেব্রা পুরো পার্ককে সুশোভিত করবে ।পার্ক তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘একটি সাফারি পার্কে বিদেশি বন্যপ্রাণি না থাকলে সেই পার্ক পরিপূর্ণতা পায়না। পার্ক প্রতিষ্ঠার অনেক বছর পরে হলেও দর্শনীয় এসব জেব্রা আনয়নের ক্ষেত্রে নির্দেশনা ছিল প্রধান বন সংরক্ষক মো. সফিউল আলম চৌধুরী স্যারের।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিদেশ থেকে পাচার করে নিয়ে আসার পর যশোরোর শার্শা উপজেলায় জব্দ করা এসব জেব্রা। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ৯ মে শার্শা থানায় মামলা করা হয়। পরবর্তীতে এসব জেব্রা প্রেরণ করা হয় গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। সেখান থেকে প্রধান বন সংরক্ষকের নির্দেশে চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জেব্রাগুলো হস্তান্তর করে গাজীপুর সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।