পর্যটকের আগমনে পাহাড় মুখরিত

পর্যটকের আগমনে পাহাড় মুখরিত
পর্যটকের আগমনে পাহাড় মুখরিত

আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান ।।

পাহাড়ের অর্থর্নীতি পর্যটকের আগমনে চাঙ্গা হচ্ছে । শীতের পরশে বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প। শীত যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য। শীতে শিশির ভেজা সকালে পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমনপিপাসু মানুষের আনাগোনা বেড়ে বদলাতে শুরু করেছে দর্শনীয় স্থানগুলোর দৃশ্যপট। প্রতিদিনই শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান জেলায় বেড়ানোর জন্য অনেকে ছুটে আসছেন দূর পাহাড়ে।

শুক্র-শনিবারও বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে তোলা নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, শৈল প্রপাত, চিম্বুক পাড়া, নীলগিরি, স্বর্ণ মন্দির ট্যুরিষ্ট স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখাগেছে বেড়াতে আসা পর্যটকদের। পর্যটকদের পদভারে মুখরিত ছিলো জেলার অন্যতম পর্যটন স্পটগুলো।

শীত মৌসুমই হলো পাহাড়ের অরণ্যের জেলা বান্দরবানের দূর্গমাঞ্চলগুলোর দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমনের উপযুক্ত সময়। প্রকৃতির নির্মল ছোয়া পেতে পার্বত্য এই জনপদের পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভ্রমন পিপাসুরা। প্রচন্ড এই শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা বান্দরবানের পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে বরফের স্তুপ। প্রকৃতি যেন সবটুকু উজাড় করে দিয়ে পেখম মেলে বসে আছে সৌন্দর্য বিকাশে। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে দূর দূরান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্যটকেরা।

এদিকে পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি মানুষগুলোর রুটি-রুজিও। পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের তৈরি শোপিস, তাঁতের কাপড়’সহ ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাগুলোর বেচা-বিক্রিও জমে উঠেছে। পর্যটকবাহী গাড়িগুলোসহ পরিবহণ ব্যবসাও অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তবে হঠাৎ করেই পর্যটক হয়রানি এবং ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা ধরণের ভোগান্তি বেড়েছে ।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আব্দুর রব, জামিল আহমেদ, ফারহানা লীনা বলেন, বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাওয়া-আসা রেইট ভাড়া হচ্ছে ৪২শ টাকা। কিন্তু কাউন্টারে গিয়েও নীলগিরি যেতে ট্যুরিস্ট গাড়ি মিলছেনা, বলা হচ্ছে সব গাড়ি বুকিং। তবে চালকদের চাহিদামত অতিরিক্ত দুই-আড়াই হাজার টাকা দিলেই গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে শুধুমাত্র নীলগিরি হলে যাবেনা, “অল স্পট” (ছয়টি) নামে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে পারলে ভাড়ায় যাচ্ছে। ট্যুরিষ্ট গাড়িগুলোর ভোগান্তি এবং পর্যটক হয়রানি যেন দিনদিন আরও বাড়ছে। পর্যটকদের জিম্মি করে কয়েকগুন বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চালকেরা। পর্যটক হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়ায় আদায় বন্ধে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।

রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মুনতাসির, সায়েদ হোসেন, নিলুফা ইয়াসমিন অভিযোগ করে বলেন, নিরাপত্তার খোড়া অজুহাতে পর্যটক হয়রানি বাড়ছে বান্দরবানে। চিম্বুকের ওয়াইজংশন ক্যাম্পে পর্যটকদের ভোটার আইডি চেক করা হচ্ছে। নিজের দেশ ভ্রমনের সময়ও কি আইডি কার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। মজার বিষয় হচ্ছে আরও পরিবারের সবার আইডি কার্ড খোঁজা হচ্ছে। এত্তগুলো মানুষের আইডি কার্ড দেখতে কত সময় লাগে, গাড়ির দীর্ঘ লাইন জমে যায়। নীলাচল ট্যুরিষ্ট স্পটে যেতে একবার রাস্তার টোল, একবার স্পটে প্রবেশের টিকেট এবং আরেকবার গাড়ি স্পটের ভিতরে নেয়ার জন্য অতিরিক্ত একশ টাকা নেয়া হচ্ছে। এই ভোগান্তি এবং হয়রানি গুলোর কারণে পর্যটকের পরিমাণ কমছে বান্দরবান জেলায়।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয়া। আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি বান্দরবানের জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে পার্বত্য এই জনপদের অর্থনৈতিক চাকাও উঠানামা করে। শীতের শুরুতে পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে পর্যটন শিল্প। চাঙ্গা হয়ে উঠছে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বাণিজ্যও।

তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে বান্দরবানে আবাসিক হোটেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেষ্টুরেন্ট এবং হস্তশিল্পের তৈরি শোপিজ, কোমর তাঁতের কাপড়ের দোকান’সহ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।

স্থানীয় ব্যবসায়ী লাল পিয়াম বম বলেন, পাহাড়িদের তৈরি তাঁতের পোষাক (কাপড়) এবং বাঁশ, কাঠের তৈরির হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রধান ক্রেতা হচ্ছে পর্যটক। বেড়াতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকেরাই এসব জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যায়। শীতে বেচাবিক্রি বেড়েছে হস্তশিল্পের।

ট্যুরিস্ট জীপগাড়ি শ্রমিক সমিতির নেতা মোহাম্মদ কামাল বলেন, পর্যটকবাহী প্রায় তিন শতাধিক মত গাড়ি রয়েছে বান্দরবান। গাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িত কয়েকশ শ্রমিকও রয়েছে। সারাবছর পর্যটক কম থাকায় ট্যুরিষ্ট গাড়িগুলোর শ্রমিকেরাও অর্থনৈতিকভাবে অনেক কষ্টে দিন কাটায়। তবে শীতে পর্যটকের আগমন বাড়ায় তাদের মুখেও হাসি ফুটেছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং পর্যটক হয়রানির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের ভ্রমনে নিরাপত্তাগত কোনো সমস্যা নেই। সম্পূর্ণ নিরাপদ এ জেলায় স্বাচ্ছ্যন্দে ঘুরে বেড়াতে পারেন পর্যটকেরা। শীতের আগমনে পর্যটকের আনাগোনাও বেড়েছে পাহাড়ে। ভ্রমনপিপাসু মানুষদের নিরাপদ ভ্রমন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।