দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় সীতাকুন্ডের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে

দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় সীতাকুন্ডের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে
দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় সীতাকুন্ডের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে

মেজবাহ খালেদ ।।

ঈদের ছুটিতে সীতাকুন্ডের বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো যদিও বৃষ্টির কারনে ঈদের দিন এবং ঈদের পরবর্তী দু’দিন তেমন দর্শনার্থী চোখে পড়েনি তবে শুক্রবার থেকে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমায়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা সীতাকুন্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসেছে। এছাড়া গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, কুমিরা ঘাট, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, আকিলপুর বিচ,  ঝরঝরি ঝরনা ট্রেইল, কমলদহ ঝরনা ট্রেইলসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র গুলোতেও নানা বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশুদের পদচারণায় পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।

শনিবার ইকোপার্কে গিয়ে দেখা গেছে, অসংখ্য পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই পর্যটন স্পটটি। পার্কের গাইড কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইকোপার্কের অন্যতম মূল আকর্ষণ হলো প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও হাজারো রকমের দুর্লভ প্রজাতির গাছ। তাছাড়া পার্কের চূড়া থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। গাইডদের মতে পার্ক থেকে মাত্র কয়েক কিঃ মিঃ পশ্চিমে এই সমুদ্র হওয়ায় বিকেলে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই এখানে এলে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখে যান। আর এক ঢিলে যেন দুই পাখি পাহাড় ও সমুদ্র দর্শন করে আবেগে আপ্লুত হন সবাই। পর্যটকরা উপভোগ করছেন পার্কের সামনে দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ বাগান, অর্কিড হাউস, গ্রীণ হাউস, পদ্ম পুকুর, ভ্যালি ব্রিজ, প্রাকৃতিক লেক, নয়নাভিরাম ঝর্ণা, আর হাজারো পাখির কলতান। ভাগ্য ভালো হলে দেখা পেতে পারেন বাঁদর, নানারকম মায়া হরিণ সহ কয়েক প্রকার বণ্য প্রাণীরও।

ঢাকার থেকে আসা শফিকুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে জলপ্রপাতে বর্ষার রূপ দেখলাম। প্রবল বেগে পাথরের ওপর আছড়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। শহুরে একঘেঁয়ে জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এমন পাহাড়ি নির্জনতা নিঃসন্দেহে সবার কাছে আকর্ষণীয়। তিনি আরো বলেন, এখানকার মূল আকর্ষণ যে ঝর্ণাটি তা দেখে তিনি মুগ্ধ। এখানে এসে তার মনে হয়েছে আসলেই এদেশে অনেক কিছুই দেখার আছে। চারদিকে সবুজ পাহাড়, মাঝখানে পাহাড় থেকে অবিরাম পড়ছে জলপ্রপাত। পাহাড়ের নীচে দাঁড়িয়ে বারৈয়াঢালা সহস্রধারা জলপ্রপাতের অপরূপ এই দৃশ্য দেখার জন্য ভিড় করছে অসংখ্য দর্শনার্থী। তিন’শ ফুট উঁচু একটি পর্বত শীর্ষ থেকে জলধারা শিলাময় স্থানে পতিত হয়। এত উচুঁ পাহাড় থেকে এভাবে যুগ যুগ ধরে জলপ্রপাতের ধারাটি নিচে যাওয়ার ফলে এখানে বিশাল কুন্ড সৃষ্টি হয়েছে।

সীতাকুন্ড ইকোপার্কের ইজারাদার জানান, ইকোপার্কে কাজী নজরুল স্মৃতি বিজড়িত সহরধারা ঝর্ণা, লেকসহ প্রাকৃতিক সোন্দর্য দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এসেছেন। এবারের ঈদে রেকর্ড পরিমাণ দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। পার্কে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি।

সীতাকুন্ডের ফকিরহাটে অবস্থিত উপজেলার সরকারি বিনোদন কেন্দ্র বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। কোয়াটারনারী ভূতাত্ত্বিক যুগে ভূপিটিলা সিরিজের ও অপার মিডল টিপাম সেন্ডষ্টোনে তৈরী বোটানিক্যাল গার্ডেনে গর্জন, ধারমারা, ডেউরা, হলুদ, বাঁশপাতা, বহেরা, জারুল, পলাশ, সোনালু, শিমুল, হরিতকি, আমলকি ও বিরল প্রজাতির সাইকাসসহ রয়েছে ১৪৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। এছাড়া হরিন, ভালুক, খরগোশ, মায়া হরিণের মত বিরল বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আনাগোনায় দর্শনার্থী ও পর্যটকের কাছে আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক।

অন্যদিকে সদ্য সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র গুলিয়াখালী বিচে গিয়ে দেখা গেছে দিগন্তজোড়া সাগরের জলরাশি আর কেওড়া বন দেখতে ভীড় করেছে শত শত পর্যটক। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল দেখার জন্য এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে মানুষ। এখানকার সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো পরিবেশ ভিন্নতা দিয়েছে। সাগরের ঢেউ বা গর্জন না থাকলেও এই নিরিবিলি পরিবেশের গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত ভিন্নভাবেই পর্যটকদের কাছে টানে। অনেকেই জেলেদের বোটে সমুদ্র দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন।

তাছাড়া বাঁশবাড়িয়া বিচে লক্ষনীয় পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল । সমুদ্রের মাঝে চলে যাওয়া এই সৈকতের লোহার ব্রিজে দর্শনার্থীরা সেলফি তোলায় ব্যাস্ত ছিল । এখানকার  ব্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে জোয়ারের স্রোতের আওয়াজ মনকে উজাড় করে দেয়। ঝাউ গাছের সারি, খোলামেলা পরিবেশ, জেগে ওঠা সবুজ ঘাসের চর সব মিলিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন অসংখ্য   দর্শনার্থী । বাঁশবাড়িয়া সৈকতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সেখানকার সূর্যাস্ত দেখা । স্পিডবোটে করে ঘুরতে দেখা গেছে অনেককে ।

এছাড়া এবারের ঈদে ভাটিয়ারির গলফ ক্লাব, সানসেট রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ২৪ রেস্টুরেন্ট, ইকোপার্কে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে এসেছেন । কুমিল্লা থেকে ফ্রিদুল আলম বলেন , পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভাটিয়ারী ক্যাফে ২৪ এর ভেতরে থাকা কাঠের তৈরি মার্মা ঘর, বাঙালি ঘর, পাহাড় ঢালে বসার ছাউনি ঘরগুলো, নানা রকম পাখ—পাখালির ঘর, লেকের পানিতে রঙিন রাইডগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে বেলা বয়ে যায় তা টেরও পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখানকার নয়নাভিরাম কনফারেন্স রুম, হরেক রকম ফুল ও পাতা বাহার গাছ অনেক ভালো লেগেছে। ভেতরের রেস্টুরেন্টের বিশালাকার সবুজ মাঠের মধ্যে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য নানারকম রাইড,  সেনা সরঞ্জামের প্রতীকী রূপ মনকে নাড়া দেয়।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন অতিবাহিত হতে চললেও রয়ে গেছে আমেজ। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হাজার হাজার দর্শনার্থী ঈদ বিনোদনে পরিবার—পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে । পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকা পর্যটন স্পটগুলোতে যোগাযোগের অবস্থা ভাল না থাকায় আসা যাওয়া করতে অনেক কষ্ট হয় অভিযোগ পর্যটকদের। যদিও সারাবছরই এখানে দেশে—বিদেশী পর্যটকরা বেড়াতে আসেন ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;