করোনার মাঝেও ঈদে আনন্দ ভাগাভাগী করছে রোহিঙ্গারা,নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা

করোনার মাঝেও ঈদে আনন্দ ভাগাভাগী করছে রোহিঙ্গারা,নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ।।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের চরম ঝুঁকির মুখেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কোনো বিধি-বিধান মানা হচ্ছে না। সোমবার (২৫ মে) ঈদের পর থেকে রোহিঙ্গারা আরও অধিক হারে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৬ মে) বেপরোয়াভাবে ক্যাম্প ছেড়ে সড়ক, উপ-সড়ক ও কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে নেমে আসে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় লোকালয় রক্ষায় এসব রোহিঙ্গাদের স্রোত ঠেকাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের।

ঈদের দিন থেকে বিভিন্ন ক্যাম্পে শিশুসহ প্রায় সব বয়সের রোহিঙ্গারা সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে ফুর্তিতে মেতে উঠেছে। রোহিঙ্গারা অনেকে নতুন জামা, গেঞ্জি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি ও চশমা পরে দল বেঁধে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

কোনো কোনো ক্যাম্পে লকডাউনের মধ্যেও নাগরদোলা, চড়কিসহ মিনি মেলা না বসলেও কিছু ক্যাম্পে খেলা বসিয়ে সেখানে ভিড় করছে রোহিঙ্গারা। তারা মানছেনা নিরাপদ শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব সহ স্বাস্থ্যবিধি।

রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১ হাজার ২২০টি মসজিদ ও ৮৪০টি নুরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মক্তব) সহ টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ৭০টির মতো মসজিদ ও ৩০টি নুরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মক্তব) ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা।

ঈদের নামাজের পর পরই রোহিঙ্গাদের মাঝে ঘুরাঘুরি, ছোটাছুটি কোলাকুলি প্রভৃতি সামাজিক রেওয়াজ শুরু হয় যা অব্যাহত রয়েছে।

কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের একাধিক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, এবার ঈদের সকাল থেকে সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের শিশু-কিশোররা। তবে অন্যবারের মতো ক্যাম্প অভ্যন্তরে খেলাধুলা ও বিনোদনের তেমন আয়োজন হচ্ছেনা। বালুখালী-১১ নং ক্যাম্পের একটি এনজিও কর্মী সৈয়দুল ইসলাম ঈদের দিন নাগরদোলা ভেঙে পড়ায় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গ্লোবাল রোহিঙ্গা ফোরাম (জিআরএফ) এর ক্যাম্প সমম্বয়কারী নুরুল আলম বলেন, বিশেষ করে করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত কামনা করে ঈদের নামাজে দোয়া করা হয়েছে। পাশপাশি মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে অধিকার নিয়ে যেন যাতে দ্রুত ফিরে যেতে পারি সেই প্রার্থনাও করা হয়েছে ঈদের জামাতে।

রোহিঙ্গারা আসলে কোন কিছুকে তেমন গুরুত্ব দিতেই চায় না। এরপরও আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব ক্যাম্পে করোনা রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৬ মে) সকাল থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। এরা নিজেরা নিজেদের মত করে এক ক্যাম্প হতে অন্য ক্যাম্পে আত্মীয় স্বজনদের নিকট যাওয়ার জন্য বেসামাল হয়ে পড়ছে।

এ সুযোগে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় টমটম, অটোরিকশা, ছোট ডাম্প ট্রাক ক্ষেত্র বিশেষে বাসও ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। উখিয়ার থাইংখালী সহ বিভিন্ন সড়ক ও উপ সড়ক গুলোতে রোহিঙ্গাদের ঢল সামলাতে আইনশৃংখলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা যায়।

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ) ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেছেন, “এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৯ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। সেখানে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব এবং অন্যান্য নির্দেশনাও মেনে চলা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”