'করোনায় অনলাইন ক্লাস' কেউ করছেন ক্লাস আর কেউ ইউটিউব এ শিখছেন চুলের কোপা বাঁধার নিয়ম, কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ

'করোনায় অনলাইন ক্লাস' কেউ করছেন ক্লাস আর কেউ ইউটিউব এ শিখছেন চুলের কোপা বাঁধার নিয়ম, কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ

রোকসানা খন্দকার রুকু।।   

বেশ কিছুদিন ধরেই ছেলেটি বাবার সাথে কথা বলে না কারন তার স্মার্ট ফোন নেই। এবার সে ইন্টারমিডিয়েটে অটোপাশ দিয়েছে। ম্যাট্রিকে জিপিএ ফাইভ ছিল, এবারও পাবে। সামনে ভার্সিটি এডমিশান টেস্ট । বন্ধুদের সবাই অনলাইন কোচিং এ ভর্তি হয়েছে।

দিব্যি অনলাইন ক্লাস করছে। তারা হয়ত চান্সও পাবে আর সে কিনা নিজে নিজে প্রিপারেশান নিচ্ছে। এভাবে হবে কিনা সে জানেনা। মনের দুঃখে সে বাবার সাথে কথা বলেনা।

তার বাবা এনজিওতে কর্মরত। করোনার সময় বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়াও এনজিও গুলোতে কিছু ছাঁটাই-বাছাই চলেছে। তাতে তিনি কয়েকমাস কর্মহীন ছিলেন। বাসাভাড়া ও অন্যান্য খরচে বেশ ঋণ- দেনা হয়েছে। তাই এখনও শোধ দিতে পারেননি। ফোন কেনা, অনলাইন কোচিং ভর্তি মিলে অনেক টাকার প্রয়োজন। এই সময়ে তিনি কোথায় পাবেন? ছেলে মেধাবী যা থাকে কপালে! এদিকে আবার রাতের ঘুমও হারাম যদি কিছু অঘটন হয়, তাহলে তো ছেলের উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। অবশেষে বেতনের উপর লোন নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করালেন কোচিংএ ও ফোন কিনে দিলেন!

********

বিকেলের শেষ রোদ পোহাতে পোহাতে, আপা ভাবীদের হাতে ঝকঝকে স্মার্টফোন। বলতে- শুনতে ভালোই লাগে-

*আর বইলেন না ভাবী, যা কষ্ট গেল বাচ্চাদের নিয়ে। অনলাইন ক্লাস আর অনলাইন পরীক্ষা কি যে একটা অবস্থা।”

*আমাদের তো একটাই স্মার্টফোন ছিল, বাবুর বাবাকে বলে একটা নতুন আনালাম; সারাক্ষন অনলাইন থাকতে হয়ে, কেউ কেউ তো ভাবে ফেসবুক চ্যাটিং এসব করি”

*হ্যাঁ সেটাই ভাবী, ব্যাটারা তো অনলাইন দেখলেই ম্যাসেজ দেয়, বিরক্তিকর!”

*আমি তো অনেকগুলারে ব্লক মারছি। তবে এটা ঠিক বাবুদের পড়ানোর নাম করে সবার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারছি; কত কথা যে জমা ছিল”!

* আমিও ভাবী, ও তো কিছু কইতেও পারে না। আবার চা বানায়েও খাওয়ায়”।

হা হা হা হা।হি হি হি হি।

স্বামী বেচারাদের আয় উন্নতি করোনায় একেবারে তলানীতে। তাতে কি? বাচ্চা বলে কথা! স্মার্টফোন এর সাথে ওয়াই ফাই কানেকশান কিংবা প্রতিদিন জিবি।

না হলে বউ এর চিৎকার, এই তোমার ছেলে ক্লাস করবে এখুনি ১০০ জিবি পাঠাও”। স্বামী বেচারা পড়িমরি করে ভোঁ দৌড়!

১০০ জিবি পেয়েই তিনি ইউটিউব এ ঢুকে শিখলেন- কিভাবে চুলের কোপা বাঁধতে হয় , কিভাবে গোল আলু রান্না করতে হয় কিন্তু কেউ খেয়ে বুঝতেই পারবেনা এটা গোলআলু না ডিম।

******

মা-বাচ্চাসহ ফোনের সামনে উপুর; কিছুক্ষনের মধ্যেই ক্লাস শুরু হবে। অবশেষে মেকাপের সাথে ম্যাডাম হাজির। শাড়ির ভাঁজ আর লিপষ্টিক এর চিন্তায় কি যে বলবেন বলে এসেছিলেন তাই মনে নেই। কি আর করা ” কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ” এমন হবেই! সবটা মেনে- মানিয়ে চলতে হবে।

রাতে ফিরে বাবা ছেলেকে প্রশ্ন করল,” বাবা আজ কি শিখলে?

ছেলের উত্তর, হ্যাঁ বাবা  প্রথমে শিখলাম ম্যাডাম সুন্দর নীল শাড়ি পড়েছিল আর,,আর ,,, মনে নেই। তুমি মাকে জিজ্ঞেস কর? মা ভালো বলতে পারবে।

এবার অনলাইনে পরীক্ষা শুরু হবে। অনেক খেটেখুটে, গবেষণা করে প্রশ্ন কর্তাগণ প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। বাবা-মা, পরীক্ষার্থী সবাই টেনশানে বাথরুম যায় আর আসে। কারন শিক্ষক নিজেই জানেন না; করোনাকালীন অনলাইন প্রশিক্ষণের, অনলাইন বোঝাপড়ায়, অনলাইন প্রশ্ন তিনি ক্যামনে করেছেন। একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন!

*******

যে কোনভাবেই হোক মোটামুটি স্বচ্ছল যারা তাদের বাচ্চাদের পড়াশুনা, পরীক্ষা সব শেষ। কিন্তু তাদের কি হবে যাদের ওয়াই-ফাই বা নেট নেই, স্মার্টফোন নেই? দুবেলা ভালো করে খেতে পারেনা, ভালো কাপড়-চোপড পরতে পারেনা। নেই কোন অনলাইন জ্ঞান কিংবা সৃজনশীল প্রশ্নও যাদের বাবা-মা বোঝেনা। তাদের কি স্মার্টফোন ছিল কিংবা তারা অনলাইন ক্লাস করেছে? পরীক্ষা দিয়েছে?

করোনা নাকি এসেছে বড়লোক, অসাধু, ঠক-বাটপার কমাতে! আসলে আমরা দেখছি উল্টোটা। কেউ ফায়দায়- কায়দায় ভরপুর। আর সেই কলোনী, বস্তি, গ্রামের গরীব, সাধারণ কৃষকের ছেলেমেয়েরা তারা আরও নিস্পেষিত। সমাজতন্ত্র আর সাম্যবাদ হাহাকার করছে তাদের ঘরে ঘরে!!! কেইবা দেখবে!!!