ইবাদতের জন্য শীতকাল সুন্দর সময়, শীতকালে সহজে নফল রোজা

ইবাদতের জন্য শীতকাল সুন্দর সময়, শীতকালে সহজে নফল রোজা
ইবাদতের জন্য শীতকাল সুন্দর সময়, শীতকালে সহজে নফল রোজা

মাহদী হাসান ।।

আল্লাহ তায়ালার হুকুমেই দিন-রাতের পরিবর্তন হয়। কখনও দিন দীর্ঘ ও রাত ছোট হয়। আবার কখনও রাত দীর্ঘ ও দিন ছোট হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে দিন থাকে বেশ দীর্ঘ আর রাত হয় ছোট। ফলে রোজা রাখা কিছুটা কষ্টকর হয়। পক্ষান্তরে শীতকালে রাত দীর্ঘ ও দিন ছোট হওয়ায় সহজেই নফল রোজা রাখা যায়। শুধু রোজা নয়; অন্য আরও অনেক ইবাদতের জন্য শীতকাল সুন্দর সময়।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬৫৬)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ (শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকি : ৩৯৪০)

শীতকালে দিনের সময় খুবই কম এবং শীতল থাকে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কষ্ট পোহাতে হয় না। গ্রীষ্মকালের মতো প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত হওয়ারও ভয়ও থাকে না। কারও যদি কাজা রোজা আদায় করা বাকি থাকে, সেসব পূরণ করার জন্য এটা সুন্দরতম সময়। এ মৌসুমে সেগুলো আদায় করে নেওয়া যায়। আর বেশি বেশি নফল রোজা রাখার তো এটি সুবর্ণ সময়!

একটি নফল রোজার প্রতিদানের বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ প্রতিদান হিসেবে জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’ (বুখারি : ২৮৪০; মুসলিম : ১১৫৩)। আল্লাহর রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা সাধারণত দুটি নফল রোজা বেশি রাখতেন। একটি হচ্ছে আইয়ামে বিজের রোজা, অন্যটি হচ্ছে সোম-বৃহস্পতিবারের রোজা।

আইয়ামে বিজের রোজা : হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ এই তিন দিনকে আইয়ামে বিজ বলে। ‘আইয়াম’ অর্থ দিন আর ‘বিজ’ অর্থ শুভ্র। চান্দ্র মাসের এ সময়ে চাঁদে ভরা পূর্ণিমা থাকে, ফলে পৃথিবী জোছনার আলো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এ জন্য এ তিন দিনকে ‘আইয়ামে বিজ’ অর্থাৎ শুভ্রতার দিন বলা হয়। হজরত আদম (আ.) সর্বপ্রথম এ রোজা রাখেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘প্রিয় নবী (সা.) আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেনÑ প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা রাখতে, চাশতের দুই রাকাত নামাজ পড়তে এবং ঘুমানোর আগে বেতর নামাজ আদায় করে নিতে।’ (বুখারি : ১১২৪)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘এখানে তিনটি রোজা বলে আইয়ামে বিজের তিন রোজাই বোঝানো হয়েছে।’ (ফাতহুল বারি)

সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা : এই দুদিন রোজা রাখা প্রিয় নবী (সা.)-এর নিয়মিত আমল ছিল। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখার ব্যাপারে নবী (সা.) খুবই যত্নবান ছিলেন।’ (তিরমিজি : ৭৪৫)। আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, ‘মানুষের আমলগুলো প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ তায়ালার কাছে পেশ করা হয়। আর আমি চাই, আমি রোজাদার অবস্থায় আমার আমলগুলো পেশ করা হোক।’ (তিরমিজি : ৭৪৭)